‘নৌকায় সিল মেরে দেখাতে হবে, নইলে ঢুকতে দেওয়া হবে না’

পুটিয়ার বানেশ্বরে গত শুক্রবার রাতে একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ ((ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের এক মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি সেখানে বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে গেলে নৌকায় সিল মেরে দেখাতে হবে। নইলে ভোটের মাঠেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। যদি তা না পারা যায়, তবে তাদের তালিকা করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

আবুল কালাম আজাদ উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নৌকার এই প্রার্থী গত শুক্রবার রাতে বানেশ্বরে একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এই নির্দেশনা দেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর ওই বক্তব্য নিয়ে অন্য প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ওই ভিডিওতে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইজা বসে আছেন। কিন্তু আসলে তাঁরা তো বিএনপির ঢাল। তাই আমি বলব, আপনারা খোঁজ রাখবেন। কার বাড়িতে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢুকছে। তার তালিকা করবেন। আমি নির্বাচনের পরে তার ব্যবস্থা নেব। আর যদি তাঁরা ভোটকেন্দ্রে যায়, তাহলে সোজা কথা, নৌকায় সিল মেরে দেখিয়ে দিবে। তাহলে ভোট দিতে দিবে, নইলে ভোটের মাঠে ঢুকতে দিবে না। যদি তা–ও না পারেন, তাইলে ওই ব্যক্তির তালিকা করবেন। আমি বানেশ্বর ওর ব্যবস্থা নিব, ওর বাড়িতে এসে। ওই (স্বতন্ত্র) প্রার্থী কার বাড়িতে ঢুকছে, এটা আমি বলে গেলাম।’

পঞ্চম ধাপে আগামী বুধবার এই ইউপিতে ভোট গ্রহণ হবে। ভিডিওর বক্তব্যের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় এটা বলে ফেলেছেন। পরে এটা ভাইরাল হয়ে গেছে। আসলে এটা রাগে-ক্ষোভে তিনি বলেছেন। আর নেতা-কর্মীদের একটু সাহস দেওয়ার জন্যও এটা অনেক সময় বলতে হয়। এ ধরনের কোনো কাজ নির্বাচনে হবে না। তিনি জনগণের ভোটে বিজয়ী হবেন।

তবে নৌকার প্রার্থীর এসব কথায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্য প্রার্থীরা। বিএনপি–সমর্থিত আনারস প্রতীকের আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, তাঁর কাছে আজ বেশ কয়েকজন ভোটার বলেছেন যে তাঁরা আতঙ্কে আছেন। তিনিও পরে ভিডিওটি দেখেছেন। এতে মানুষের ভয় পাওয়ার মতো কথাবার্তা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ থানা ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেবেন বলে জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি–সমর্থিত হাতুড়ি প্রতীকের প্রার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এই ইউপিতে ২০ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে। লোকজন ভোটে সহিংসতা চান না। যদি লোকজন ভোটই না দিতে পারেন, তবে ভোটের আয়োজন কেন? এ ধরনের বক্তব্যে প্রমাণ হয়, এখানে ভোট হবে না।’