পঞ্চগড়ে চা-চাষিদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছে ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল
দেশের উত্তরাঞ্চলে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা-চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চা বোর্ডের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন আলো ছড়াচ্ছে চা-চাষিদের মধ্যে। চা-চষিদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে বলা হচ্ছে ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’। মানসম্পন্ন চা উৎপাদন এবং কৃষকের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ চাষিদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। এ কর্মসূচি থেকে ইতিমধ্যে উত্তরের পাঁচটি জেলার চা-চাষিরা উপকৃত হতে শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ক্ষুদ্রায়তন চা-চাষিদের দক্ষতা উন্নয়নে এর আগেও বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। তবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরও ত্বরান্বিত করতে এবং চাষিদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে খোলা আকাশ স্কুল পরিচালনার কথা বলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম। ওই বছরের ২৫ অক্টোবর তেঁতুলিয়ায় চাষিদের নিয়ে প্রথমবারের মতো চালু করা হয় প্রশিক্ষণ স্কুল। চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম Camellia sinensis (ক্যামেলিয়া সিনেনসিস) থেকে ক্যামেলিয়া অংশটি নিয়ে স্কুলের নামকরণ হয় ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল।
এরপর থেকেই বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় চা-চাষিদের ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। এর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের ১ হাজার ৫১০ জন নিবন্ধিত এবং ৫ হাজার ৮০০ জন অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা-চাষির দোরগোড়ায় প্রশিক্ষণ সেবা সারা বছর চালু থাকবে। ইতিমধ্যে পাঁচটি জেলার ৩২টি স্থানে এই খোলা আকাশ স্কুল পরিচালনা করেছে চা বোর্ড।
দেয়াল ও ছাদবিহীন এই স্কুল গতানুগতিক কোনো স্কুল বা পাঠশালা নয়। এখানে চাষিদের চা-সম্পর্কিত অজানা তথ্য জানানোর পাশাপাশি চাষিদের চায়ের জাত নির্বাচন, নার্সারি তৈরি, চারা রোপণ, পাতা চয়ন, প্রুনিং, সেচ ও পানির নিষ্কাশন, সার প্রয়োগ, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে ৪০ থেকে ৫০ জন ক্ষুদ্র চা-চাষি নিয়ে আয়োজন করা হয় একেকটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায়।
দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় চা-দিবস পালিত হচ্ছে ৪ জুন শুক্রবার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চা বোর্ডের উদ্যোগে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে। দিবসটি সামনে রেখে পঞ্চগড় শহরের ইসলামবাগের বাসিন্দা চা-চাষি এইচ এম নুরুন্নবী চা-চাষে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে বলেন, ‘চা বোর্ডের ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল আমাদের মতো সাধারণ চাষিদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা উত্তরাঞ্চলের মানুষ খুব অল্প ধারণা থেকেই চা-চাষ শুরু করেছিলাম। এখন ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে চায়ের চারা রোপণের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পাতা চয়ন পর্যন্ত খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পেরেছি। এই প্রশিক্ষণের কারণেই আমার সাত বিঘা জমির একটি চা-বাগান প্রায় সাত দিন পানিতে ডুবে থাকার পরও ভালো রাখতে পেরেছি।’
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সোনাপাতিলা গ্রামের চা-চাষি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল চা-চাষিদের দক্ষতা উন্নয়নে একটা বড় হাতিয়ার। চা-বাগানের কোন রোগে কী কীটনাশক দিতে হবে, কীভাবে চারা লাগাতে হবে, আর কীভাবে পাতা তুলতে হবে—সবকিছুই এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখান থেকে আমরা চাষিরা নানাভাবে উপকৃত হই। চাষিদের স্বার্থে এই প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাটি সব সময় চালু থাকা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় এ পর্যন্ত হাতেকলমে ৩২টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অব্যাহত থাকবে। করোনাকালেও থেমে নেই প্রশিক্ষণ। বিশেষ এই পরিস্থিতিতে জুম অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল প্রশিক্ষণ কর্মশালা অব্যাহত রেখেছি আমরা।’