পঞ্চগড়ে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট স্থগিতের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

পঞ্চগড়ে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। উপায় না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে যান গন্তব্যে। শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় শহর সংলগ্ন করতোয়া সেতু এলাকায়
প্রথম আলো

প্রতিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকেরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছেন।
আজ শনিবার সকাল থেকে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু ভোট গ্রহণ না হওয়ায় সকাল থেকে মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। এতে অনার্স পরীক্ষার্থী ও টিকা নিতে আসা মানুষেরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনের জন্য গত ২৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হয়। আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেন।

গতকাল গভীর রাত থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন শ্রমিকেরা। আজ সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেন তাঁরা।

শ্রমিকেরা জানান, পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০০ সালে এই সংগঠনের একটি অংশের শ্রমিক নেতারা বের হয়ে গিয়ে পঞ্চগড় জেলা ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করেন। এরপর ২০১২ সাল থেকে দুটি সংগঠন একে অপরকে অবৈধ দাবি করে শ্রম আদালতে মামলা এবং উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মামলা চলছিল। এরই মধ্যে ২৯ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়।

২০০০ সালে এই সংগঠনের একটি অংশের শ্রমিক নেতারা বের হয়ে গিয়ে পঞ্চগড় জেলা ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করেন।

বোদা উপজেলার সাকোয়া এলাকা থেকে জেলা সদরে আসা কলেজছাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, তাঁর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। বেলা একটায় পরীক্ষা শুরু। দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখেন বাস বন্ধ। পরে সাকোয়া থেকে অনেক কষ্টে ভেঙে ভেঙে ইজিবাইকে পঞ্চগড়ে এসেছেন। এখানে এসে ধাক্কামারা এলাকায় আটকা পড়েছেন। এখান থেকে পায়ে হেঁটে কলেজে যাচ্ছেন।

আবদুর রহিম নামের এক তরুণ বলেন, তাঁরা দিনাজপুর চিরিরবন্দর এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে পিকনিকে যাচ্ছেন। পঞ্চগড়ে এসে শোনেন, এখানে সড়ক অবরোধ। এখানে আটকা পড়েছেন। তাঁরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে জানান।

পঞ্চগড় জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত শ্রমিকেরা খেয়ে না খেয়ে গাড়ি বন্ধ রেখে মহসড়কসহ পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরের সব সড়কের ওপর অবস্থান করবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শামীম খালেদের মাধ্যমে মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ পেয়ে নির্বাচন স্থগিত করেছি।’

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছেন, শিগগিরই অবরোধের বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।