পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো পাঠ্যবই নেই

সদর ও বন্দর উপজেলার ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী পাঠ্যপুস্তক পায়নি। বারবার তাগাদা দিলেও বই সরবরাহ করছে না সংশ্লিষ্ট ছাপাখানা।

বই

বছরের শুরুতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হয়। সে অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় বই বিতরণ করা হয়। কিন্তু ২ উপজেলার ৩২৬টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে এখনো নতুন পাঠ্যবই পৌঁছায়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নির্ধারিত ছাপাখানা থেকে গত ডিসেম্বরেই বই সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বই সরবরাহ করা হয়নি। বই না পাওয়ায় একদিকে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে, অন্যদিকে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।

বন্দর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছাপাখানা থেকে বই না দেওয়ায় ৭৫টি প্রাথমিক ও ৭০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ৫ হাজার শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি। ছাপাখানায় বারবার যোগাযোগ করলেও বই সরবরাহ করেনি তারা। শিক্ষক-অভিভাবকেরা বইয়ের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এনসিটিবির বাফার স্টক থেকে গত মঙ্গলবার দেড় হাজার সেট বই পাঠানো হয়েছে। সেগুলো আপাতত বিতরণ করা হবে।

সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মুক্তা বেগম বলেন, সদরের ১২০টি প্রাথমিক ও ৬০টি কিন্ডারগার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির ২৫ হাজার শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি। বাফার স্টক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেট বই এসেছে। আপাতত সেগুলো দেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর ও বন্দর উপজেলায় মোট ১৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৩০টি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ৩৪ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য ২ লাখ ৮ হাজার ২১২টি বই বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এনসিটিবির কাছ থেকে এই দুই উপজেলার বই ছাপানোর দায়িত্ব পেয়েছে বন্দরের নবীগঞ্জে অবস্থিত জাহানারা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন। তারা বই ছাপানোর পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠালে সেগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত দুই মাসে ছাপাখানা থেকে পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই সরবরাহ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীগঞ্জের জাহানারা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ছাপাখানাটি বর্তমানে তালাবদ্ধ। ছাপাখানার মালিক আলম হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বই সরবরাহ করা হবে। এত দিন কেন বই সরবরাহ করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি ফোন রেখে দেন।

বন্দরের কদম রসুল শিশুবাগ স্কুলের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার বলে, সে নতুন বই পায়নি। কবে বই দেবে, তা-ও স্কুল থেকে তাকে জানানো হয়নি। স্কুল থেকে পুরোনো বই দেওয়া হয়েছে। সেই বই দিয়েই পড়াশোনা করছে। ৪৭ নম্বর লাল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত আহমেদ। তার মা ফারজানা আক্তার বলেন, স্কুলও খোলে না, বইও দেয় না। এমনিতেই ছেলেমেয়েরা পড়তে চায় না। বই ছাড়া তারা পড়বে কীভাবে? শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে, এর দায়দায়িত্ব কে নেবে?

করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বর্তমানে অনলাইনে ক্লাস চলছে। বই না পেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপে পড়েছেন স্কুলের শিক্ষকেরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, গত ডিসেম্বরে জাহানারা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের বই সরবরাহের কথা থাকলেও তারা করেনি। এনসিটিবির বাফার স্টক থেকে এক–তৃতীয়াংশ বই চলে এসেছে। সেগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘বিষয়টি জেনে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ইতিমধ্যে কিছু বই চলে এসেছে। বাকি বইও দ্রুত চলে আসবে।’