পটুয়াখালীতে জোয়ারের পানিতে বাঁধ আরও ঝুঁকিতে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ঘূর্নিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়। আজ সকালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর আন্ডার চর এলাকার বাঁধেছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’–এর প্রভাবে পটুয়াখালীর নদ-নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বছর আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের পরও জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। বেশি ঝুঁকিতে আছে ২০ কিলোমিটার বাঁধ।

এদিকে জোয়ারের পানির প্রবল চাপে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ উপচে জোয়ারের পানিতে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার অন্তত ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালীর অরক্ষিত পাঁচটি চরাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীতে সকাল থেকে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে; সঙ্গে বইছে হালকা বাতাস। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে।

বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। আজ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী সদর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালী কার্যালয় জানায়, পাউবো পটুয়াখালী কার্যালয়ের আওতায় ৮২২ কিলোমিটার, কলাপাড়া কার্যালয়ের আওতায় ৫২০ কিলোমিটারসহ মোট ১ হাজার ৩৪২ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬১ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ আরও ঝুঁকিতে পড়েছে। অনেক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি গ্রামের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এ ছাড়া রাঙ্গাবালী উপজেলার আন্ডার চর, চরমোন্তাজ ও চালিতাবুনিয়া—এ তিন এলাকা অরক্ষিত।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে আন্ডার চরে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পুরো এলাকা। গলাচিপার চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। চরবিশ্বাস এলাকার বাসিন্দা মাহাবুব সিকদার জানান, রাতের জোয়ারে পানি আরও বাড়বে। বাঁধের পাশের মানুষ আতঙ্কে আছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাশফাকুর রহমান জানান, তাঁদের বিচ্ছিন্ন পাঁচটি চরাঞ্চলের মানুষকে আজই মূল ভূখণ্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। এর লক্ষ্যে বড় ধরনের ট্রলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

পাউবো পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সকালের জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ১০ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ খোলা রয়েছে।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার ৮০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে ৫২টি মুজিব কিল্লা। ৯৩টি চিকিৎসা দলসহ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত আছে। প্রতিটি উপজেলায় শিশুখাদ্যের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গবাদিপশুর খাবারের জন্য প্রতিটি উপজেলায় এক লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। উপজেলাসহ প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জেলায় মোট ১ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।