পটুয়াখালীতে সাপের খামার বন্ধ করে সাপ অবমুক্তের উদ্যোগ

প্রায় ১০ বছর আগে আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাস তাঁর বাড়িতে অবৈধভাবে বিষধর প্রজাতির সাপের খামার স্থাপন করেন
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর নন্দীপাড়া গ্রামে গড়ে তোলা অবৈধ সাপের খামার বন্ধ করাসহ খামারের বিষধর সাপগুলো উদ্ধার করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের প্রতিনিধিদল ও পটুয়াখালীর বন বিভাগের প্রতিনিধিরা খামারটি পরিদর্শন করেন। খামারটি অবৈধ ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির হওয়ায় খামারটি বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন পটুয়াখালী বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রণব কুমার মিত্র, দশমিনা রেঞ্জ কর্মকর্তা অমিতাব বসু, ঢাকা বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক। এ ছাড়া জেলা বন বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাস তাঁর বাড়িতে অবৈধভাবে বিভিন্ন বিষধর প্রজাতির সাপের খামার স্থাপন করে। রাজ্জাক বিশ্বাস খামারের বিষাক্ত সাপের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতেন। এ ছাড়া ঝাড়–ফুঁকের মাধ্যমে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার কুসংস্কার চালু করেন। এ অবস্থায় গত ১১ এপ্রিল বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট থেকে রাজ্জাক বিশ্বাসকে খামারটি বন্ধ করাসহ খামারের সাপগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে রাজ্জাক বিশ্বাস তাঁর খামারের কার্যক্রম চালু রেখেছিলেন।

এদিকে ২৭ মে জব্বার তালুকদার (৩২) নামের ওই খামারের এক কর্মচারীকে সাপ কামড় দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে জব্বারকে হাসপাতালে না নিয়ে রাজ্জাক বিশ্বাস ও তাঁর ভাই হিরণ বিশ্বাস ঝাড়–ফুঁক করেন। পরে জব্বারেরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর জব্বারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক জানান, অবৈধ সাপের খামার তৈরি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান আছে।

তবে রাজ্জাক বিশ্বাস বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চিঠি পাননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর খামারটি অবৈধ নয়। ২০০৮ সালে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ‘বাংলাদেশ স্নেক ভেনম’ নামের সাপের খামারটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। ২০১৮ সালে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে তিনি এখনো কোনো অনুমোদন পাননি। কিন্তু তাঁর খামারটি অবৈধ সেটিও বলা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

পটুয়াখালীর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করা ওই খামার সম্পূর্ণ অবৈধ। এটি বন্ধ করার জন্য এপ্রিল মাসে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খামার মালিক নির্দেশ মানেননি। আমরা প্রধান কার্যালয়ে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। খামারের সাপ অবমুক্ত করার জন্য প্রশিক্ষিত লোক চেয়েছি।’