পটুয়াখালীতে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ, সাঁকোতে দুর্ভোগ

সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় বাঁশের সাঁকোতে খাল পার হতে হচ্ছে গ্রামের বাসিন্দাদের। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নাগের ভারানী খালে
প্রথম আলো

‘উৎপাদিত ধান বাজারে নিয়া ধান বিক্রি করমু, তা পারি না। যার কারণে কম মূল্যেই বাড়িতে বসে এখন খেতের তোলা ধান বিক্রি করি।’ দুঃখ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন প্রান্তিক কৃষক আবদুর রহিম হাওলাদার। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি।

চম্পাপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে নাগের ভারানী খালের ওপর নির্মিত একটি সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় আবদুর রহিমসহ এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কাজে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সেতু না থাকায় এই এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাও নাজুক। খালের ওপর নির্মিত একটি বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে অন্য এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। এ কারণে গ্রামের বাসিন্দারা ভারী কোনো জিনিস বাইরে নিয়ে যেতে পারছেন না। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। তাঁদের উৎপাদিত ফসল গ্রামে থেকেই বিক্রি করতে হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাগের ভারানী খালের ওপর লোহার তৈরি একটি সেতু ছিল। সেটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তা ভেঙে নতুন সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আংশিক কাজের পর আর কাজ না হওয়ায় দুই বছর ধরে এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী ও সেতুর তদারককারী কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন জানান, সেতুটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাশেম কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স পল্লি স্টোরস। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর নতুন করে আবার ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু সেতুর তিনটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন পুরো কাজই বন্ধ। লোহার রডগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিনামকাটা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম মুন্সী জানান, গত মে মাস থেকে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ। বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে শিশু ও বয়স্কদের অসুবিধায় পড়তে হয়। ধানসহ অন্যান্য ফসলও গ্রামের বাইরে বিক্রির জন্য নেওয়া যায় না।

চম্পাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার বলেন, ‘সেতুর এখনো ৭০ শতাংশ কাজ বাকি। শুনেছি, ঠিকাদারকে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কেন কাজ করছেন না, তা বুঝতে পারছি না।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কলাপাড়া উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মোহর আলী বলেন, নকশা পরিবর্তন, ঠিকাদারের অসুস্থতা, প্রবল বর্ষণ ও করোনা মহামারির কারণে সেতুর নির্মাণকাজ ব্যাহত হয়েছে। বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।