পদ্মায় তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত, সড়কে গাড়ির লম্বা সারি

দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সারিতে আটকে আছে বাস, ট্রাকসহ কয়েক শ যানবাহন। আজ সকালে
ছবি: প্রথম আলো

বৈরী আবহাওয়া এবং পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে যানজট প্রায় তিন কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘ সারিতে আটকে আছে বাস, ট্রাকসহ কয়েক শ যানবাহন। ঘাটে আসার পর ৮-১০ ঘণ্টায়ও ফেরির নাগাল মিলছে না বলে জানান ভুক্তভোগী ট্রাকচালকেরা। খাবার, পানি ও শৌচাগারের প্রয়োজনে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিবহনশ্রমিক ও চালকেরা।

গোয়ালন্দ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার (পানি পরিমাপক) সালমা খাতুন বলেন, তিন দিন ধরে গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে পদ্মার ছোট-বড় চরগুলো এর মধ্যে ডুবতে শুরু করেছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ডুবতে শুরু করেছে।

সালমা খাতুন বলেন, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানির স্তর বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে পানির স্তর হয় ৭ দশমিক ৭৪ মিটার। পদ্মার এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৫০ মিটার।

সরেজমিন আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘাট এলাকায় দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোত দেখা দিয়েছে। অতিমাত্রায় স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিটি ফেরি নদী পার হতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে।

বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

যানবাহন ফেরিতে উঠতে না পেরে দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী যানবাহনের লম্বা সারি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ফেরিঘাট সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের সারি রয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহন ও কাঁচামালবোঝাই ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

দৌলতদিয়া ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি ফেরির মধ্যে ১৬টি চলাচল করছে। বাকি চারটি ফেরি মধ্যে দুইটি ফেরি স্রোতের কারণে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বাকি দুইটি ফেরি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামতে রয়েছে। ফলে এই নৌপথে ফেরিগুলোর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়ে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে।

প্রতিটি ফেরি নদী পার হতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। আজ দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

মাগুরা থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাকচালক আকমল হোসেন বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঘাটে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়ি। এখন বেলা ১১টা বাজলেও এখনো ফেরির দেখা পেলাম না। রাতে ঘুমাতে পারিনি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধীরগতিতে গাড়ি ঘাটের দিকে এগোচ্ছে। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না।’

সাতক্ষীরা থেকে আসা গাজীপুরগামী কাভার্ডভ্যানের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার ভোর চারটার দিকে ঘাটে এসেছি। গাড়িতে কোনো মালামাল নেই। ফেরির জন্য প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে সিরিয়ালে অপেক্ষা করছি। জানি না কখন নদী পার হতে পারব।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় নদী পারের জন্য ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহন ও কাঁচামালের ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।