পদ্মা সেতুতে ৩৬তম স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু

ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মা সেতু
ফাইল ছবি

পদ্মা সেতুতে আজ বৃহস্পতিবার ৩৬তম স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের ২ ও ৩ নম্বর খুঁটির দিকে রওনা হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যেই এটি পৌঁছে যায়।

সেতুসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, সময় থাকলে আজই নির্দিষ্ট খুঁটিতে বসানো হতে পারে, নয়তো শুক্রবার সকালে স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ স্প্যানটি বসানো হলো সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটার দৃশ্যমান হবে।

৩৫তম স্প্যান বসানোর  ৬ দিনের মধ্যে এই স্প্যানটি বসানোর কার্যক্রম শুরু হলো। গত ৩১ অক্টোবর মাওয়া প্রান্তের ৭ ও ৮ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ৩৫তম স্প্যান। সম্পূর্ণ সেতু দৃশ্যমান হতে আর বাকি রইল ৬টি স্প্যান। গত মাসে বসানো হয় ৪টি স্প্যান।

সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সোয়া ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ ওয়ান-বি নামের স্প্যানটিকে নিয়ে রওনা হয়। ভাসমান ক্রেনটি পিলারের কাছে আসার জন্য খনন করা হয়েছে। ২-৩ নম্বর পিলারের অবস্থান মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। পদ্মা নদীর একাবারে তীরের কাছাকাছি। স্প্যান বসানোর সব ধরনের প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে অবস্থান করে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বৃহস্পতিবারই বসিয়ে দেওয়া হবে।

দেওয়ান আবদুল কাদের আরও বলেন, শীতের আগমনীতে নদীতে কুয়াশা পড়া শুরু হয়ে গেছে। আজ সকালে প্রচণ্ড কুয়াশা পড়েছিল। এক কিলোমিটার দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না। আজ যদি স্প্যান বসানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া যায় এবং বিকেলে কুয়াশা পড়া শুরু হয়ে যায়, তাহলে শুক্রবার সকালে পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ৩৬তম স্প্যানটি বসানোর পর ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০ নম্বর খুঁটিতে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান ১-এ), ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর খুঁটিতে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৪১ নম্বর স্প্যানটি (স্প্যান ২-এফ) বসানোর কথা রয়েছে। সবগুলো স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ১৬৫টির বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৬৪৬টির বেশি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।

এরপর একে একে বসানো হয়েছে ৩৫টি স্প্যান। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ০৩ ভাগ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ ভাগ। এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত তারিখ অনুসারে ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুর সব ধরনের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।