পদ্মা সেতু ঘিরে পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের দেওয়া হলো প্রশিক্ষণ

আগামী মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু। জাজিরা প্রান্তে সেতুর বিভিন্ন অবকাঠামো দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। ১৪ মে জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা এলাকায়
ফাইল ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুর জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর আয়োজন করে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা মঙ্গলবার বিকেলে শেষ হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০ জন উদ্যোক্তা অংশ নেন।

সোমবার অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে কর্মশালার উদ্বোধন করেন এটুআই  প্রকল্পের পরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আসমাউল হুসনা লিজা।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পর্যটন ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন বিখ্যাত পণ্যের ব্র্যান্ডিং ই–কমার্সে অন্তর্ভুক্তির জন্য উদ্যোক্তাদের কারিগরি ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এটুআই প্রোগ্রামের কর্মকর্তা ওমর ফারুক, সরকারি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান একসপের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম। এর সমন্বয় করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসমাউল হুসনা লিজা ও সহকারী কমিশনার অভিজিৎ সূত্রধর।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু প্রস্তুত হয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সেতু বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন। পদ্মা সেতুকে ঘিরে ইতিমধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। তাঁরা সেতুর বিভিন্ন অবকাঠামো ঘুরে দেখছেন। সেতু চালু হওয়ার পর এ অঞ্চলে পর্যটনের একটি বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ কারণে তরুণ উদ্যোক্তাদের পর্যটন খাত বিষয়ে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে।

জাজিরার নাওডোবা থেকে শিবচরের মাদবরচর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর জন্য নির্মিত সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদীশাসন এলাকা এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র। খুব কাছ থেকে সেতু দেখার জন্য সেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন। এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জের সখীপুরের কৃষিপণ্যের উদ্যোক্তা এস এম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জেলায় পদ্মা নদী শুরু জাজিরার নাওডোবা থেকে। নদীটি ভেদরগঞ্জ হয়ে গোসাইরহাটে গিয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এ নৌপথের দৈর্ঘ্য ৭০ কিলোমিটার। এর দুই তীরে অসংখ্য চরে হাজার হাজার মানুষের বাস। চরের জীবনযাপন ঘুরে দেখা স্থানীয় পর্যটকদের কাছে প্রিয়। এ ছাড়া পদ্মা–মেঘনা নদীর অন্তত ৩০টি ছোট-বড় হাটবাজারে ইলিশের হাট বসে, যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।’

এস এম ফেরদৌস আরও বলেন, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় রামঠাকুরের আশ্রম, সুরেশ্বর দরবার শরিফ, চিশতিনগর দরবার শরিফ, ভেদরগঞ্জের মহিসার দ্বিগম্বরের দীঘি, ছয়গাঁও, কার্তিকপুর, হাটুরিয়া জমিদারবাড়ি, সদরের রুদ্রকর মঠ, ধানুকা মনসাবাড়ি, নড়িয়ায় গীতিকার অতুল প্রসাদ সেনের বাড়ি, মানসিংহের দুর্গসহ নানা দর্শনীয় স্থাপনা রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এসব স্থানে পর্যটকদের আগমন আরও বাড়বে।

২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জিডিবির ২ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যটন খাত থেকে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৪০ লাখ পর্যটক আসেন। তাঁদের বেশির ভাগ সুন্দরবন ও উত্তরবঙ্গে চলে যান। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এ অঞ্চলের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে। তখন পর্যটকদের এ অঞ্চলমুখী করার চেষ্টা করতে হবে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘এ অঞ্চলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাজে লাগিয়ে পর্যটনের বিস্তার ঘটাতে চাই। সে জন্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।’