পরচুলার টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী তাঁরা

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পরচুলার টুপি তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় পরচুলার টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা। তাঁদের বেশির ভাগ স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রী। এ কাজ করার কারণে তাঁদের নিজেদের আয় বেড়েছে। পরিবারগুলোতেও এসেছে সচ্ছলতা। উপজেলা তারাকান্দি এলাকায় দুই বাড়িতে এই টুপি বানানোর কারখানা হয়েছে। এখানে প্রায় দুই শ নারী এ কাজে জড়িত।

গত রোববার পরচুলার টুপির এ কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি বাড়ির চারটি ঘরে স্থানীয় প্রায় দুই শ নারী, স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা গভীর মনোযোগ দিয়ে পরচুলা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরচুলা তৈরি করে প্রতি মাসে পাঁচ-সাত হাজার টাকা আয় করছেন তাঁরা। প্রতিটি টেবিলে স্ক্রুর সাহায্যে আটকানো আছে প্লাস্টিকের ডামি মাথা। ডামি মাথার ওপর রয়েছে নেট। নেটের ফাঁকে ফাঁকে সুচের ফোঁড়ে খুব মনোযোগ দিয়ে আটকানো হচ্ছে একেকটি চুল। ডামির পুরো মাথায় সূক্ষ্মভাবে চুল আটকানো সম্ভব হলেই ক্যাপ তৈরির কাজ শেষ। মনোযোগ আর দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক ভাবনা থেকে তৈরি হচ্ছে মনোরম টুপি। প্রতিটি টেবিলে মুখোমুখি হয়ে দুই থেকে চারজন কারিগর কাজ করছেন।

কথা হয়, কারিগর মমতাজ বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ১৩ বছর ধরে তিনি এ কাজ করেন। আগে ঢাকায় কাজ করলেও আড়াই বছর ধরে তারাকান্দি গ্রামে এ কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি জানান, তাঁর মতো অনেকে পরচুলার টুপি তৈরি করে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন তাঁদের পরিবারে। বর্তমানে এখানে দুই শতাধিক নারী এ কাজে জড়িত।

সুমাইয়া আক্তার পাশের উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে বলে, দুই বছর আগে আরেক সহপাঠীর মাধ্যমে সে এখানে এসেছে। সেই থেকে এখানে পরচুলার টুপি তৈরির কাজ করছে সে। সে বলে, এখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। তাঁরা পড়ালেখার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে পরিবারকেও সহায়তা করতে পারছেন।

কারিগর ও মহাজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরচুলার একটি টুপি বানাতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে তিন দিন। একজন মাসে ৮ থেকে ১০টি টুপি বানাতে পারেন। এতে প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। প্রকারভেদে প্রতিটি টুপিতে ২০ থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত চুল লাগে। টুপি তৈরিতে লাগে মাথার ডামি, চুল, নেট, সুচ, সুতা, চক ও পিন। প্রতিটি টুপি বিক্রি হয় এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়।

মহাজন জাহেদুল মিয়া বলেন, টুপি তৈরির এসব উপকরণ তিনি ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন। পরচুলা তৈরি করে আবার ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে রপ্তানি হয় চীন, জাপান, ভারত, দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সরকার যদি তাদের সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা দিত তাহলে এ কাজের আরও প্রসার ঘটাতে পারতেন তাঁরা।

পাকুন্দিয়ার ইউএনও রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, এলাকার স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাসহ নারীরা পরচুলার টুপি তৈরির এ কাজ করছেন, এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায় এবং এ কাজের কীভাবে প্রসার ঘটানো যায়, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেবেন।