পরিবারের সুখের আশায় গ্রিস যেতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন আমিন

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তুরস্ক থেকে আমিন উল্লাহর লাশ দেশে আনা হয়
ছবি: সংগৃহীত

জীবিকার তাগিদে ২০১৯ সালে দেশ ছাড়েন আমিন উল্লাহ (২৮)। প্রথমে যান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর যান তুরস্কে। এরপর তিনবার অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে ব্যর্থ হন। চতুর্থবারের চেষ্টায় গ্রিসে ঠিকই পৌঁছান, তবে সে দেশের পুলিশ তুরস্কে পাঠিয়ে দেয় আমিন উল্লাহকে। ফেরার পথে ঠান্ডায় প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ইস্তাম্বুলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

আমিন উল্লাহর মৃত্যুর কয়েক দিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি পরিবার খবরটি জানতে পারে। রোববার সন্ধ্যায় তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁর লাশ দেশে আনা হয়। আমিন উল্লাহর বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের চর সাহাভিকারী গ্রামে।

সন্তানের লাশ আসছে শুনে সকাল থেকে মা রাজিয়া খাতুন বাড়ির আঙিনায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপর আর্তনাদ করে সন্তানের নাম ধরে ডাকছিলেন তিনি। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন স্বজনেরা।

আমিন উল্লাহর বাবা আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে পড়ালেখা বন্ধ করে ওমানে গিয়েছিল। অভাব-অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে সে নিজ উদ্যোগে তুরস্ক থেকে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ছেলে আমার লাশ হয়ে ফিরল। ছেলের নিথর দেহ আমাকে বইতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। আমিনের পাঁচ বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে রয়েছে। তাকে কী বুঝ দেব, ভেবে পাচ্ছি না।’

আবুল কাশেম বলেন, তুরস্কে যাওয়ার পর আমিন উল্লাহর সঙ্গে সিলেটের এক দালালের পরিচয় হয়। তিনি তুরস্ক থেকে লোকজনকে অবৈধভাবে গ্রিসে পাঠানোর কাজ করেন। গ্রিসে যাওয়ার জন্য আমিন তাঁকে ১০ লাখ টাকা দেন। তিনবার গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর গত ৩১ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো দালালের মাধ্যমে আরও ২০ জনের সঙ্গে অবৈধভাবে তুরস্ক থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লে গ্রিসের পুলিশ তাঁদের আবার তুরস্কে ফেরত পাঠায়। ফেরার পথে প্রচণ্ড শীতে আমিন উল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ইস্তাম্বুলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার কয়েক দিন পর পরিবার তাঁর মৃত্যুর খবর পায়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, আমিন উল্লাহর বড় ভাই সাইফুল ইসলাম আগে থেকে গ্রিসে অবস্থান করছেন। তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমিন উল্লাহর লাশ পৌঁছায়। এরপর সোনাগাজীতে লাশ এনে জানাজা শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।