পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হওয়ার সব সম্ভাবনা জাহাজমারা সৈকতের আছে

মো. মাশফাকুর রহমান

চারদিকে সমুদ্রের জলরাশি। সন্ধ্যায় ভাটার সময় সমুদ্রসৈকত থেকে জল যখন নামতে শুরু করে, তখন অসংখ্য লাল কাঁকড়ার ছুটে চলা আলপনার মতো ফুটে ওঠে। বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্যটা যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায়। এমন একটি জায়গার নাম জাহাজমারা। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নে এর অবস্থান। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে এই জায়গার সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাশফাকুর রহমানের সঙ্গে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: মানুষের কাছে জাহাজমারা সৈকতের পরিচিতি কবে থেকে?

মাশফাকুর রহমান: ভৌগোলিকভাবে জাহাজমারা এলাকার নাম চরবগলা।

বঙ্গোপসাগরের এই এলাকা ছিল আন্তর্জাতিক নৌরুট। স্থানীয় লোকজনের মতে, ব্রিটিশ আমলে একটি বিদেশি জাহাজ ওই চ্যানেলে আটকা পড়ে এবং আস্তে আস্তে পলি পড়ে ডুবে যেতে থাকে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়েও জাহাজটি চ্যানেলে দেখা গেছে। তখন থেকেই আশপাশের লোকজন জাহাজটি দেখতে ওই এলাকায় যেতে থাকে। সেই থেকেই হয়তো নামকরণ হয়ে যায় জাহাজমারা।

প্রশ্ন:

জাহাজমারা সৈকতে পর্যটকেরা কেন যাবেন বলে মনে করেন?

মাশফাকুর রহমান: আমাদের পাশেই রয়েছে কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র। সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা এক পথেই চলাচল করেন। পর্যটকেরা কুয়াকাটা বেড়ানো শেষে যে পথে আসেন, আবার সে পথেই ফিরে যান। কিন্তু আমরা যদি জাহাজমারা সৈকত আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে পর্যটকেরা ইচ্ছে করলেই কুয়াকাটা থেকে সাগরপথে জাহাজমারা সৈকতে যেতে পারবেন। আবার জাহাজমারা থেকে সোনারচর ঘুরতে পারবেন। সেখান থেকে আবার ভোলার চর কুকরিমুকরি বেড়িয়ে ভোলা দিয়ে তাঁদের গন্তব্যে ফিরতে পারবেন। আমাদের মনে হচ্ছে, এসব কারণে পর্যটকদের চলাচল বাড়বে।

প্রশ্ন:

পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জাহাজমারা সৈকতকে জনপ্রিয় করতে আপনাদের কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?

মাশফাকুর রহমান: উপজেলা প্রশাসন নানান উদ্যোগ নিয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো জাহাজমারা সৈকতে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছিল বিচ ফেস্টিভ্যাল। ৯ নভেম্বর মৌডুবি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই বিচ ফেস্টিভ্যালে কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা এসেছিলেন। ইতিমধ্যে সৈকত এলাকায় যাত্রী ছাউনি, পর্যটকদের সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জাহাজমারায় যাতে একটি ডাকবাংলো নির্মাণ করা হয়, এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের এক কিলোমিটারে সংরক্ষিত বন আছে। সৈকতের সৌন্দর্য বাড়াতে সেখানে ঝাউবাগান করার পরিকল্পনা নিয়েছে বন বিভাগ।

প্রশ্ন:

যাতায়াতব্যবস্থা উন্নত করতে কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?

মাশফাকুর রহমান: নদীপথে গলাচিপার পানপট্টি, কলাপাড়া, পায়রা বন্দর, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে ট্রলার ও বিভিন্ন নৌযানে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। তবে সড়কপথে যাতায়াত সহজ করতে উপজেলা প্রশাসন পরিকল্পনা নিয়েছে। গলাচিপার পানপট্টি থেকে রাঙ্গাবালীর কোড়ালিয়া ঘাট পর্যন্ত আগুনমুখা নদীতে ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থা এবং রাঙ্গাবালীর খালগোড়া ও চরগঙ্গা মধ্যে প্রবাহিত দাড়ছিড়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চরগঙ্গা থেকে জাহাজমারা সৈকত পর্যন্ত সড়ক পাকা করা হবে। এতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়কপথেই পর্যটকেরা জাহাজমারা সৈকতে যাতায়াত করতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ জাহাজমারা। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে এই দ্বীপ। সমুদ্রের পাড়ে আছে ঘন বনাঞ্চল। সমুদ্রের ঢেউ আর সবুজ প্রকৃতি এ এলাকার পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়। জাহাজমারা সৈকত পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হওয়ার সব সম্ভাবনা জাহাজমারা সৈকতের আছে। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে জাহাজমারা সৈকত পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে। রাঙ্গাবালীর মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।