সিলেটে পুলিশি হেফাজতে রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত একমাত্র পলাতক আসামি আবদুল্লাহ আল নোমানের গ্রেপ্তারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার দুপুরে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারিত ছিল। শুনানিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ নোমানের মালামাল না পাওয়ার বিষয় জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ সময় আদালতের বিচারক পলাতক আসামি নোমানের গ্রেপ্তারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, ‘শুনানিতে আদালত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের বিচারক নির্দেশনা দিয়েছেন কমপক্ষে দুটি পত্রিকায় নোমানের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাপাতে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁকে অবহিত করা হবে যে তিনি আদালতে হাজির না হলে তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য শুরু হবে।’
এর আগে ৫ ডিসেম্বর নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের পরোয়ানার বিষয়ে শুনানির তারিখ ছিল। তবে ওই দিন পুলিশ পরোয়ানা তামিল এবং এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল না করায় শুনানি পিছিয়ে ২২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছিলেন আদালতের বিচারক।
আজ আদালতে শুনানিকালে রায়হান হত্যার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এ ছাড়া আদালতে রায়হানের মা সালমা বেগমসহ স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, মো. হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহ আল নোমানের (৩২) বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত ছয়জন আসামির মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাবন্দী। অভিযোগপত্রভুক্ত ৬ নম্বর আসামি আবদুল্লাহ আল নোমান পলাতক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয় এবং একমাত্র পলাতক আসামি নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।