পাইকারিতে কমলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে আগের দামে

সরকারের অভিযানের প্রভাবে মজুতদারেরা ধান কেনা কমিয়েছেন। এতে নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বড় আড়তে ধানের দাম কিছুটা কমেছে।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ছায়তনতলীতে ধানের বাজার। গতকাল সকালে
প্রথম আলো

বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যে ধানের দাম স্থানভেদে মণপ্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। এর প্রভাবে পাইকারি বাজারে মিনিকেট চালের দাম কমেছে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা। তবে তা সাধারণ ক্রেতার খরচে কোনো প্রভাব ফেলেনি। খুচরা বাজারে চালের দাম আগের মতোই।

গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল শুক্রবার দেশের অন্যতম ধান, চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় পাইকারিতে ধান বিক্রি হয় মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে। চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁ পাইকারি বাজারে দাম কমেছে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা। অপরদিকে কুষ্টিয়ায় ধানের দাম কমেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম খাজানগরে চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা কমে।

এদিকে রাজধানীতে চালের দাম পাইকারিতেও কমেনি। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও মিরপুর-১ নম্বরের চাল আড়তে দাম আছে আগের মতোই। গতকাল এই দুই বাজারে পাইকারিতে বিআর-২৮ চাল ৪৮-৪৯ এবং মিনিকেট ৬৩-৬৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে বলে আড়তমালিকেরা জানিয়েছেন।

মিরপুর-১ নম্বর পাইকারি চাল আড়ত মালিক ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন-উর-রশিদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কুষ্টিয়া ও নওগাঁয় মিনিকেট চালের দাম ৬৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই দামে মিরপুরের ব্যবসায়ীরা চাল কেনেননি। এ কারণে মিরপুরের পাইকারি বাজারে দাম কমার কোনো প্রভাব নেই। আগের মতোই মিনিকেট চাল ৬৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, দাম কমানোর পরও ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা থেকে কোনো ফরমাশ আসছে না। আড়তদারেরা ধানের দাম কমিয়েছেন। এ জন্য চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা কমানো হয়েছে। ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ টাকা।

ফরমাশ না আসার কারণ হিসেবে জয়নাল আবেদীন বলেন, এক মাস ধরে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা প্রচুর চাল কিনেছেন। তাঁদের কাছে হয়তো পর্যাপ্ত চাল জমা হয়েছে। এ জন্য নতুন করে আর চাল কিনতে চাইছেন না।

পাইকারিতে ধান–চালের দাম কমার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, মজুতবিরোধী অভিযান ও চালকলমালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর মিলমালিকেরা কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।

গতকাল কুষ্টিয়া পৌর বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী মা স্টোরের মালিক আহম্মদ মনজুরুল হক বলেন, ‘শুনেছি, চালের দাম একটু কমেছে। কিন্তু দোকানে এখনো পাঁচ দিনের চাল আছে। পাইকারিতে নতুন দামে কেনা চাল আসতে আরও এক সপ্তাহ লাগতে পারে। এ জন্য খুচরায় দাম স্থিতি রাখা হয়েছে।’

এর আগে গত এক মাসে কুষ্টিয়া ও নওগাঁয় চালের দাম ৬ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। ধানের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের কারণে দাম বাড়িয়ে দেন মিলমালিকেরা।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ চকদার বলেন, ঝড়বৃষ্টির কারণে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে বোরো মৌসুমেও বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল। বাজার নিয়ন্ত্রণে গত মঙ্গলবার থেকে সরকার অভিযান শুরু করে। এ সময় মজুত করা মিলমালিকদের কেউ কেউ ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার কেউ কম পরিমাণে ধান কিনছেন। এ কারণে দাম কমেছে।

নওগাঁ জেলার অন্যতম বড় ধানের বাজার ছায়তনতলী হাট। গতকাল সকালে বাজারটিতে প্রতি মণ জিরা ধান মানভেদে ১ হাজার ২৩০ থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। গত সোমবার এই বাজারে জিরা ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৩৮০ টাকা। আর কাটারিভোগ ধান সোমবার বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। সেই ধান গতকাল বিক্রি হয় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়।

এদিকে হঠাৎ ধানের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ার কথা বলেছেন কৃষকেরা। ছায়তনতলী বাজারে ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন মহাদেবপুরের ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, সংসারের প্রয়োজনে ১০ মণ ধান হাটে আনেন। কিন্তু আড়তদারেরা ১ হাজার ৩৮০ টাকার ধানের দাম হাঁকেন ১ হাজার ২৫০। পরে ওই দামেই বেচতে বাধ্য হন।

ছায়তনতলী বাজারের ধানের আড়তদার মতিউর রহমান বলেন, ‘অভিযানের ভয়ে বেশি ধান কিনতে পারছি না। গুদামে বেশি ধান রাখলেও সমস্যা। যেকোনো সময় ম্যাজিস্ট্রেট এসে জরিমানা করতে পারেন।’