পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর গলা কেটে হত্যা

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পান ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেনের লাশ শুক্রবার আশুলিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় পাওনা তিন লাখ টাকার জন্য চাপ দেওয়ায় এক পান ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে গলা কেটে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে। অপহরণের ২০ দিন পর পুলিশ অপহরণকারী দলের একজন সদস্যকে আটক করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের  ভিত্তিতে রাজধানীর আশুলিয়া থানার কাশবন থেকে গতকাল শুক্রবার ওই পান ব্যবসায়ীর গলিত লাশ ও পরনের কাপড় উদ্ধার করা হয়।

মারা যাওয়া ওই ব্যবসায়ীর নাম মোফাজ্জল হোসেন। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নের পার লক্ষ্মীপুর-চানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে শিবগঞ্জ উপজেলার ভাসুবিহার-চানপাড়া গ্রামের রুবেল হোসেন (৩০), মিলন (৪৫) ও মোহাম্মদ সামাদ (৫০) গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগম বাদী হয়ে শনিবার সকালে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মোফাজ্জল হোসেন বিভিন্ন হাটবাজারে পানের ব্যবসা করতেন। গত ১৯ আগস্ট সকালে ব্যবসার কাজে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে স্ত্রী রাশেদা বেগম মুঠোফোনে খোঁজ করলে মোফাজ্জল তাঁকে জানান, তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বন্দরে অবস্থান করছেন। পাওনাদারদের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার কথা আছে। টাকা পেলেই বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু রাত ১২টার পরও তিনি বাড়িতে আর ফিরে আসেননি। পরদিন দুপুর ১২টার পর তিনি মোফাজ্জলের মুঠোফোনে কল করে তা বন্ধ পান। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর করেও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে ২৩ আগস্ট শিবগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রাশেদা বেগম। মোফাজ্জলের নিখোঁজের খবর গণমাধ্যমেও ছাপা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল পুলিশকে জানিয়েছেন, পাওনা তিন লাখ টাকার জন্য চাপ দিয়েছিলেন মোফাজ্জল হোসেন। এ কারণে রুবেল, মিলন ও সামাদ তিনজন মিলে মোফাজ্জলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে মোকামতলা বন্দর থেকে মোফাজ্জলকে অপহরণের পর মাইক্রোবাসে তুলে ঢাকার আশুলিয়ায় নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর সেখানকার মরা গাঙ নামের নদের তীরে গলা কেটে হত্যার পর তাঁর লাশ কাশবনে ফেলে রাখা হয়।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মোফাজ্জলের সঙ্গে চলাফেরা ও টাকাপয়সার লেনদেন ছিল রুবেল হোসেনের। কিন্তু মোফাজ্জল নিখোঁজের পর থেকে রুবেলকেও বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে গত বৃহস্পতিবার মোফাজ্জলের স্বজনেরা লালমনিরহাট থেকে রুবেলকে খুঁজে বের করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। মোফাজ্জল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তায় স্বজনদের সন্দেহ হয়। পরে শিবগঞ্জ থানায় খবর দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার পুলিশ রুবেলকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধারের পর পোশাক দেখে মোফাজ্জলের ছোট ভাই ছাইম তাঁর গলিত লাশ শনাক্ত করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য গলিত লাশটি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় শনিবার মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগম থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পরপরই রুবেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে মিলন ও সামাদকেও গ্রেপ্তার করেছে। আজ শনিবার প্রধান আসামি রুবেল বগুড়ার একটি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।