পাগলা মসজিদের সিন্দুকে পাওয়া গেল ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকের টাকা গণনা করা হচ্ছে। শনিবার বিকেলেতাফসিলুল আজিজ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক থেকে এবার পাওয়া গেল ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা। আজ শনিবার বিকেলে গণনা শেষে এই টাকার হিসাব পাওয়া যায়। এই নগদ টাকা ছাড়াও দান হিসেবে বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা এবং হীরা ও সোনার বেশ কিছু অলংকার পাওয়া গেছে। ৪ মাস ২৬ দিন পর আজ পাগলা মসজিদের ৮টি সিন্দুক খুলে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী পাওয়া গেছে।

এর আগে সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সে সময় নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আজ সকাল ৯টায় মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। সিন্দুক থেকে ১২টি বস্তায় টাকা ভরা হয়। এরপর মেঝেতে রেখে শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় মসজিদ ও মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকের টাকা গণনা করা হচ্ছে। শনিবার বিকেলে
তাফসিলুল আজিজ

টাকা গণনাকাজ তদারকি করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা ইয়াসমিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলহাস হোসেন, মো. ইব্রাহীম, মাহামুদুল হাসান, মো. উবায়দুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, অর্ণব দত্ত ও পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞাসহ পাগলা মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। সে জন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ পাগলা মসজিদে দান করতে আসেন।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকের টাকা গণনা করছেন রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। শনিবার বিকেলে
তাফসিলুল আজিজ

এমনই একজন সজনী রানী দাস (৪০)। অসুস্থ মেয়ে পূজা রানী দাসকে (১২) নিয়ে আজ দুপুরে নেত্রকোনা থেকে পাগলা মসজিদে দান করতে এসেছিলেন তিনি। মেয়ের অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য মা-মেয়ে পাগলা মসজিদে টাকা মানত করেছেন। সজনী রানী দাস প্রথম আলোকে বলেন, মনের আশা পূরণের জন্য তাঁরা প্রায়ই পাগলা মসজিদে দান-খয়রাত করতে আসেন। গতকাল তাঁর মেয়ে স্বপ্ন দেখেছে, পাগলা মসজিদে মোমবাতি আর টাকা দান করছে। তাই আজ তাঁরা মোমবাতি আর টাকা নিয়ে মসজিদে ছুটে এসেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদের অবস্থান। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসায় এর অর্থ ব্যয় করা হয়। এবার মসজিদের আয় দিয়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে দেওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স
প্রথম আলো

পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, এবার গণনা শেষে যে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা পাওয়া গেছে, তা রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ বেশ কিছু অলংকার পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে জমা পড়েছে। এখানে শতকোটি টাকার বেশি অর্থ দিয়ে বড় আকারের একটি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।