পানি কমছে, বৃষ্টি না হওয়ায় স্বস্তি

বন্যার পানি নামছে। ভেসে উঠছে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক। গতকাল সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের চালবন্দ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়া এবং একই সময়ে উজানের পাহাড়ি ঢল কম নামায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। সুরমাসহ জেলার সব নদ-নদী ও হাওরে পানি কমছে। এতে মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে।

বন্যার পানি কমলেও এখনো জেলার সাতটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক যান চলাচলের অনেকটাই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

গত শুক্রবার থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এদিকে বন্যার পানি কমায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। বৃষ্টি হলেই এখন আতঙ্ক বাড়ছে সুনামগঞ্জের বন্যার্ত মানুষের। শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী মাহবুবুল হাসান বলেন, আর বৃষ্টি নয়, অনেক হয়েছে। মানুষের মনে ভয় ঢুকে আছে। এত ভয়াবহ, এত লম্বা বন্যা সুনামগঞ্জে আগে কখনো হয়নি।

শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি পারভেজ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘ভয়াবহ বন্যা পর মাঝখানে কিছুদিন পরিস্থিতির উন্নতি হলো। এর পর থেকে আবার ভারী বৃষ্টি। তিন-চার দিন ধরে বড় ভয়ের মধ্যে ছিলাম। আবার কী হয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এভাবে কয়েকটা দিন রোদ থাকলে, মানুষের মন থেকে আতঙ্ক, ভয় কেটে যাবে।’

সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন ভয়াবহ বন্যা শুরুর পর ২০ জুন থেকে মাঝখানে এক সপ্তাহ বৃষ্টি ছিল না। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। এরপর ২৭ জুন থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পানি বাড়তে থাকে। টানা চার দিন পর শুক্রবার আবার রোদ উঠল।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলেন, বৃষ্টি হলেও হালকা থেকে মাঝারি হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হবে না। সুরমা নদীর পানি কমেছে। আজ রোববার সকালে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচে।

তবে সুনামগঞ্জে এখনো বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে বন্যার পানি আছে। পানি কমলেও অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না। অনেকের বাড়িঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার চারটি উপজেলার সঙ্গে এখনো সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

সুনামগঞ্জে ১৬ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। অসংখ্য বাড়িঘর, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। সুনামগঞ্জ টানা চার দিন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও ছিল বন্ধ। সুনামগঞ্জ পৌর শহরে চার থেকে সাত ফুট পানি হয়। হাজারো মানুষ আশ্রয় নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘরে।

মাঝখানে এক সপ্তাহ বৃষ্টি ছিল না। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। কিন্তু ২৭ জুন থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। এতে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি কিছুটা বেড়েছে। এখনো অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আছে। অনেকেই ফিরেছে, আবার যাদের বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তারা ফিরতে পারছে না। সরকারি হিসাবেই বন্যায় সুনামগঞ্জে ৪৫ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ। তবে সচেতন মানুষ বলছে, সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৯৫ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহ জানান, সুনামগঞ্জের পাশাপাশি ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও গত তিন দিন বৃষ্টি কম হয়েছে। যে কারণে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টি হলেও হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এতে পানি বাড়বে না।