পানি কমায় দুর্ভোগ বাড়ছে, এখনো ত্রাণের সংকট

এখনো পানিতে তলিয়ে আছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাইয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ। গতকাল শনিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কাইয়ারহাট গ্রামের গৃহিণী হেয়াতন নেছা (৫৫)। ২০ বছর আগে স্বামী নজিম উদ্দিন মারা গেছেন। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে খলিল মিয়াকে (২০) নিয়ে তাঁর সংসার। খলিল দিনমজুরের কাজ করেন। সে আয়ে কোনোমতে সংসার চলে। সরকারি জায়গায় একটি কুঁড়েঘরে বসবাস। এবারের বন্যায় ঘরের বেড়া, আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। পানি কমতে শুরু করলেও এখন বন্যার কারণে হাতে কাজ নেই। ধারদেনা করে চলছেন।

ঘরের পাশে কাইয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটুপানি। মাঠ দিয়ে পানি আনতে যাওয়ার সময় হেয়াতন নেছা বলেন, ‘বানের পানি কমব্যার নাগচে। পানি কমব্যার ধরি হামার ঘরে কসটো বাড়চে। ম্যালা খতি হচে। বানের জন্নে ব্যাটা কামলা দিব্যার পায় না। ঘরোত খাবার নাই। চেরমেনের কাচে গেচিনো। ইলিপ (ত্রাণ) পাই নাই।’

গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত কাইয়ারহাট গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। বন্যার পানিতে ডুবে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। শৌচাগারে এখনো পানি। ধীরে ধীরে পানি কমায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়েছে। অনেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি। বিশুদ্ধ পানির সমস্যা তো আছেই। বিশেষত কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি, যা দেওয়া হয়েছে, তা অপ্রতুল।

কাইয়ারহাট গ্রামের কছিরন বেগমের (৬০) স্বামী ভোলা মিয়া অনেক আগে মারা যান। একসময় তাঁদের পাঁচ বিঘা জমি ও বসতভিটা ছিল। কয়েক বছরে নদীভাঙনে সবই শেষ। কছিরন বেগম কাইয়ারহাট গুচ্ছগ্রামে থাকেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে। বন্যায় হাতে কাজ নেই। কছিরন বেগম বললেন, ‘ঘরোত যেকন্যা খাবার আচিলো তাক শ্যাষ হয়া গেচে। দুই দিন থাকি দেনাকরি খাবার নাগচি। আর কাউয়ো ইলিপ দ্যায় নাই।’

একই গ্রামের ছকু মিয়ার (৫৫) একটি ঘর ও একটি নলকূপ ডুবে নষ্ট হয়েছে। পানি নামতে শুরু করলেও নলকূপ ও শৌচাগার জাগেনি। ডুবে যাওয়া নলকূপের পানি খারাপ হয়েছে। তাই নদীর পানি গরম করে খাচ্ছেন। ফলে অনেকের পেটের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছকু বলেন, ‘পানি বারলেও হামারঘরে কসটো, কমব্যার ধরলেও কসটো। ইলিপ তো পাই নাই। দেনাকরি খাবার নাগচি।’

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা মুঠোফোনে বলেন, ইউনিয়নের ১২টি মৌজার মধ্যে ৯টি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে চলে গেছে। এর মধ্যে কাইয়ারহাট, রসুলপুর, সাতারকান্দি, ভারারদহ গ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ ইউনিয়নে মাত্র দেড় মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন, যা গত শুক্রবার মোট ৪৫০ জনের প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার পেয়েছেন। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে কঞ্চিপাড়ায় লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৩৫ হাজার। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই অভাবী। সে অনুপাতে তিনি ত্রাণ বরাদ্দ পান না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত ইউনিয়নগুলোর জন্য ১৫ মেট্রিক টন চাল, ৬৪৩ প্যাকেট শিশু খাবার ও ৪৫০ প্যাকেট গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। আগে যা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে।