পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট, পাম্প তলিয়ে সিলেট নগরে সুপেয় পানির সংকট

বাড়ির টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় সংরক্ষণ করে রাখা বৃষ্টির পানি ছেঁকে বিশুদ্ধ করছেন একটি পরিবারের সদস্যরা। আজ শুক্রবার সিলেট নগরের কলাপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বন্যার পানিতে সিলেট নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত সিটি করপোরেশনের পানি বিশুদ্ধকরণ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট) প্লান্ট তলিয়ে গেছে। ফলে প্লান্টটি থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি চারটি পাম্পও তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় নগরে কয়েকটি এলাকার পানিবন্দী মানুষ সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন।

নগরের কলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিনের বাড়ির টিউবওয়েলটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। রমিজ জানান, খাবার পানির জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রেখেছিলেন। সেগুলো কাপড়ে ছেঁকে পাত্রে রাখছেন। এরপর সেই পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করবেন।

রমিজ উদ্দিনের মতো ভোগান্তিতে নগরের শাহজালাল উপশহর, শেখঘাট, কলাপাড়া, সোনাপাড়া, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ার পার, চালিবন্দর কানিশাইল, মণিপুরি রাজবাড়ী, তালতলা, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

আরও পড়ুন

নগরের মণিপুরি রাজবাড়ী এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ কুমার শীল বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে পানিবন্দী। পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ময়লা পানি মাড়িয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য প্রতিবেশীর বাড়িতে যেতে হয়। সিটি করপোরেশন পানি সরবরাহ করলেও যে সংগ্রহ করতে পারবেন, এমন পরিস্থিতি নেই। কারণ, পানির রিজার্ভ ট্যাংক বন্যার পানির নিচে রয়েছে। সেটি চালু করলে ময়লা পানি প্রবেশ করবে।

একই এলাকার বাসিন্দা সুদিপ্ত দেব বলেন, ঘরের ভেতরে পানি। এর মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি ব্যবহার্য পানির ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখন পানি কমার জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না।

পানিতে তলিয়ে গেছে একটি টিউবওয়েল। আজ শুক্রবার সিলেট নগরের কলাপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নগরের মেন্দিবাগ এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমদ বলেন, আগে সিটি করপোরেশন থেকে লাইনে এক বেলা পানি সরবরাহ করা হতো। এখন বন্যা পরিস্থিতির পর থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খাবার পানির পাশাপাশি নিত্যদিনের পানির সংকটে আছেন। এখন প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে বালতিতে করে ব্যবহার ও খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত বলেন, এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নিজ বাসার মোটর চালু করেছেন। আবার সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ পানি সরবরাহের ট্যাংক দিয়েও সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার আগপর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি) আবদুস সোবহান বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ময়লা পানি প্রবেশ করেছে। এ জন্য সেটি চালু করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা পাম্পগুলোও পানির নিচে থাকায় চারটি পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কিছু পাম্প চালু রয়েছে। সেগুলো দিয়ে নগরে এখনো যাঁরা ভালো অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের দুই হাজার লিটারের ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক রয়েছে। সেটি দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, পানিবন্দী অবস্থায় থাকা বাসিন্দাদের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৩টি। সেখানে বিশুদ্ধ পানি থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। পানির সমস্যা সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।