পাবনায় পিস্তল ঠেকিয়ে সাংবাদিককে হত্যাচেষ্টা, অস্ত্রধারী আটক

পিস্তলসহ কথিত সাংবাদিক সাইফুল ইসলামকে (৪৫) আটকের পর থানায় নেওয়া হচ্ছে। আজ দুপুরে পাবনা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

পাবনায় দ্য বাংলাদেশ টুডে পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আবদুল হামিদ খানের (৫২) মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আবদুল হামিদ খান অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তবে ধস্তাধস্তির সময় পিস্তলের আঘাতে তাঁর মাথায় ক্ষত হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই জেলা পরিষদ কার্যালয়ের লোকজন সাইফুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে পিস্তলসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে। তাঁর বাড়ি জেলা সদরের ছাতিয়ানী মহল্লায়। তিনি নিজেকে ক্রাইম ফাইল নামে কথিত একটি পত্রিকার সাংবাদিক বলে দাবি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিক আবদুল হামিদ খান জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমানের কক্ষে বসে ছিলেন। এ সময় সাংবাদিক পরিচয়ে সাইফুল সেখানে উপস্থিত হন। তিনি নিজেকে ক্রাইম ফাইল পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করেন। তখন আবদুল হামিদ খান পত্রিকাটি কোথা থেকে বের হয় জানতে চাইলে তিনি খেপে যান। দুজনের কথোপকথনের একপর্যায়ে বাগ্‌বিতণ্ডা তৈরি হয়। হঠাৎ সাইফুল ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল বের করে আবদুল হামিদ খানের মাথায় ঠেকিয়ে ট্রিগার চাপেন। কিন্তু পিস্তল লক থাকায় গুলি বের হয়নি। তখন আবদুল হামিদ খান আত্মরক্ষার জন্য তাঁর হাত ধরতে গেলে সাইফুল পিস্তল দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। পরে তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে কার্যালয়ের বাইরে থাকা লোকজন এসে ওই অস্ত্রধারী ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পাবনা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল হামিদ খান অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তিনি দ্রুত অস্ত্রধারীর হাত ধরে ফেলায় দ্বিতীয়বার তিনি ট্রিগার চাপতে পারেননি। তবে পিস্তল দিয়ে মাথায় আঘাত করেছেন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন আবদুল হামিদ খান। তাঁকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চোখের সামনে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত ও বিব্রত। সাংবাদিক আবদুল হামিদ খানকে আমি চিনি। তবে অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তিকে চিনি না।’

পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কথিত সাংবাদিককে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। তবে অস্ত্রটি তাঁর লাইসেন্স করা বলে জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় সাংবাদিক আবদুল হামিদ খান একটি মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিকে কোনো দিন দেখিনি। তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সন্ত্রাসী কায়দায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যাচেষ্টা করেন। একজন উপসচিবের কক্ষে এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখানো কোনো অবস্থায়ই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ওই অস্ত্রধারীর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাই। সেই সঙ্গে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’