সংযোগ সড়ক পাকা না হওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা ফেরি ও লঞ্চঘাটে গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান নেই। ফেরিতে ওঠানামায় পাকা সংযোগ সড়ক নেই। লঞ্চে ওঠানামার সংযোগ সড়ক নেই। ফলে ফেরিতে ওঠার সংযোগ সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এতে চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। এ ছাড়া যাত্রীছাউনি ও শৌচাগার নেই এই ঘাটে।

বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশের দুপাশে গর্ত করে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। সড়কের জংশন বাজারের শেষ মাথায় মেঘনার তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ উঁচু বাঁধ পার হয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের ফেরিঘাটে যেতে হয়। ঘাটের পন্টুন থেকে সড়ক বিভাগের পাকা সড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক কাঁচা। সেখানে বড় বড় গর্ত। বর্ষাকালে কাদাপানিতে সড়ক পিচ্ছিল থাকে। শুকনা মৌসুমে ধুলাবালুতে একাকার। ঘাটের আশপাশে যানবাহন রাখার কোনো জায়গা নেই। আগে সড়কের পাশে মালবোঝাই ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস রাখা হতো। এখন সড়কের দুপাশ কাটা হয়েছে। গর্তের কারণে যানবাহন রাখা যাচ্ছে না।

গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, কাদাপানির কারণে ফেরিঘাটের দুটি পন্টুনে ওঠানামায় যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। সংযোগ সড়কে কাদা কম, তারপরও যাত্রীরা পিছলে পড়ছেন। ফেরিতে ওঠার গ্যাংওয়ে জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে।

লঞ্চঘাটের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে সড়ক থেকে বাঁধে ওঠার কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ব্লক ধসে গেছে। ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক ঘুরে লঞ্চঘাটে আসতে হয়। এ ব্যস্ত লঞ্চঘাট দিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় প্রায় ২০টি লঞ্চ লক্ষ্মীপুর ও ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। যখন ঘাটে লঞ্চ ও ফেরি ভেড়ে তখন ঘাটের আশপাশ যানজটের সৃষ্টি হয়।

ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টায় ছেড়ে যায় কর্ণফুলী-৩ লঞ্চ। ওই লঞ্চের যাত্রী জসিম উদ্দিন বলেন, সড়ক থেকে লঞ্চঘাটে উঠে আসার সরাসরি কোনো রাস্তা নেই। ফেরিঘাট ঘুরে বেড়িবাঁধ হয়ে আসতে হয়। মাটির বাঁধের রাস্তায় অতিরিক্ত কাদা হয়েছে। কাদাপানির পথ ডিঙিয়ে আসতে বারবার পা পিছলে যাচ্ছে।

বরিশাল থেকে আসা চৌমুহনীগামী ট্রাকের চালক আবদুল্লাহ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ এ ঘাট থেকে শুধু আয় করছে। কিন্তু খরচের নাম নেই। সড়ক থেকে ফেরিতে উঠতে রাজ্যের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এরপরে জোয়ারের সময় চুপ করে ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। ফেরিতে গাড়ি ওঠানো যায় না।

ভোলা-চট্টগ্রাম পথের পরিবহনশ্রমিক হোসেন বলেন, পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় যাত্রীবাহী বাসগুলোকে সড়কের ওপরে রাখতে হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু ঘাটে কোনো যাত্রীছাউনি নেই। কোনো টয়লেট নেই। এ অবস্থায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।

ভোলার চরফ্যাশন থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক উজ্জ্বল হাওলাদার বলেন, বিআইডব্লিউটিএর যাত্রীছাউনি সব সময় তালা মারা থাকে। ফেরিসংকটে ট্রাকচালককে পাঁচ থেকে সাত দিন ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। টয়লেটবিহীন ঘাটে পণ্যবাহী চালকদের সমস্যা চরম। এটা দেখার কেউ নেই।

ইলিশা লঞ্চ ও ফেরিঘাটের ইজারাদার ইউসুফ পাটওয়ারী বলেন, এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের

জায়গা না থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তি পোহান। তাঁরও আর্থিক ক্ষতি হয়। বৃষ্টি হলে সংযোগ সড়কে কাদাপানি হয়। পণ্যবাহী যান ফেরিতে ওঠানামায় সময় লাগছে। জোয়ারের উচ্চতা বাড়লে দুটি ঘাটই ডুবে যায়।

ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান বলেন, তিনি বিআইডব্লিউটিসিকে পন্টুনের সমস্যা এবং সড়ক ও জনপথকে সংযোগ সড়ক পাকা করার বিষয়ে একাধিকবার বলেছেন। তারা আশ্বাসও দিয়েছে।

ইলিশা ফেরিঘাটের জমি নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে পার্কিং প্লেস নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির বরিশালের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ। সওজের ভোলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেন, মহাসড়ক থেকে ফেরিতে ওঠার মধ্যে সংযোগ সড়কটি অন্য বিভাগের অধীন। এ কারণে পাকা করতে গেলে তাদের অনুমতি লাগবে। বরাদ্দ পেলে অনুমতি নিয়ে সড়ক পাকা করা হবে।