পিরোজপুরে আ.লীগের বর্ধিত সভার শুরুতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫

সংঘর্ষের পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরুর আগে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বর্ধিত সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পৌঁছান। তখন মিলনায়তনে প্রবেশ করা নিয়ে আউয়ালের অনুসারীদের সঙ্গে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

সংঘর্ষে আউয়ালের অনুসারী পিরোজপুর পৌর শ্রমিক লীগের সহসম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন (২৫), আওয়ামী লীগ কর্মী সিরাজুল ইসলাম (৪০), ছাত্রলীগ কর্মী মো. শাহীন শুভ (২৫) ও আলিফ হোসেন (২৬) আহত হন। তাঁদের পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর অনুসারীদের মধ্যে নেছারাবাদ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম (৪০) আহত হয়েছেন।

আউয়ালের অনুসারী আহত সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে বর্ধিত সভাস্থলে যাওয়ার সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে মন্ত্রীর লোকজন আমাদের ওপর হামলা করেন।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর অনুসারী আহত শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদত এস এম মুইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যখন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনুষ্ঠানস্থলে যাচ্ছিলেন তখন প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর অনুসারীরা তাঁর একটি ব্যানার নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারীরা প্রাণিসম্পদমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ শুরু করেন। তখন উভয় পক্ষের অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল, সাধারণ সম্পাদক এম এ হাকিম হাওলাদার, সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আজিম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকীব ওরফে বাদশা প্রমুখ।

আফজাল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ১৩ বছর দল ক্ষমতায়। এর মধ্যে অনেকে নেতা হয়েছেন। যাঁদের পরিবারের কেউ আগে আওয়ামী লীগ করেনি, তাঁদের হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে হবে। আমি আজকের বর্ধিত সভার প্রবেশপথে অনেক নেতা-কর্মীকে দেখেছি, যাঁরা ব্যক্তি ও নেতার নামে স্লোগান দিচ্ছেন। কেউ কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দেননি। এ থেকে বের হয়ে আসেন।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল বলেন, ‘পিরোজপুর আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে দীর্ঘদিন ধরে আমি কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু একটি সুবিধাবাদী মহল আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি আছি এবং থাকব।’ প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর উদ্দেশে আউয়াল বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে নৌকা না পেলে আপনিও পাবেন না। এটা আমি চ্যালেঞ্জ করলাম।’

বর্ধিত সভায় নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ আগামী ১৮ জুন নির্ধারণ করা হয়।