পুকুরেই উৎপাদন করা যাবে গলদা চিংড়ির পোনা

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের এমন আটটি পুকুরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

হ্যাচারিতে নয়, এবার পুকুরেই উৎপাদন করা যাবে গলদা চিংড়ির পোনা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক গবেষণা করে ওই ফলাফল পেয়েছেন।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের পুকুরে গবেষণা চালিয়ে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন তাঁরা।

গবেষকেরা বলছেন, ওই পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে চিংড়ি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পোনার অভাবে গলদা চিংড়ি চাষ যে সংকটের মুখে পড়েছিল, সেই সংকট কেটে যাবে। পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা (পিএল) উৎপাদন এবং তা দিয়ে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারিত হলে প্রাকৃতিক ও হ্যাচারি উৎসের ওপর নির্ভরতা কমবে। গলদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি হলে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা।

২০২০ সালের প্রথম দিকে ওই গবেষণা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। এ জন্য বটিয়াঘাটার ছয়ঘরিয়া গ্রামে আটটি পুকুর ইজারা (লিজ) নেওয়া হয়। গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয় বরিশালের কচা ও বিষখালী নদী থেকে আহরণ করা ৯০টি মা গলদা। পুকুরের পানিতে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে তাঁরা কিছু প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশল কাজে লাগান। পোনা উৎপাদনের জন্য পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, অক্সিজেনের উপস্থিতি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পানির প্রবাহ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সব অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেন।

পুকুরে উৎপাদিত গলদা চিংড়ির পোনা।
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের এপ্রিল-মে মাসেই সফলতা আসে। প্রথমবার কিছুটা কম পোনা পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় বছরে সফলতা এসেছে বেশি। বর্তমানে ওই পোনা পুকুরে চাষ করে ফলাফল যাচাই করা হচ্ছে। ওই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে সলিডারেডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই গবেষণা প্রকল্পে দুই শিক্ষকের সঙ্গে পাঁচজন শিক্ষার্থীও যুক্ত ছিলেন।

প্রকল্পের প্রধান গবেষক ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) অধ্যাপক মো. নাজমুল আহসান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ১ শতক আয়তনের পুকুরে ১৫ থেকে ২০টি মা গলদা দেওয়া যায়। এরপর মাসখানেক পরিচর্যার পর ৪০ থেকে ৫০ হাজার পোনা পাওয়া সম্ভব। বছরে কমপক্ষে দুবার পোনা উৎপাদন করা যায়। তবে বৃষ্টি কম হলে ও তাপমাত্রা ঠিক থাকলে তিনবার উৎপাদন করা সম্ভব, সে ক্ষেত্রে পোনার পরিমাণ তুলনামূলক কম হতে পারে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত পোনা উৎপাদন করা যায়।

নাজমুল আহসান বলেন, বর্তমানে পুকুরে উৎপাদিত পোনার বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পুকুরে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা, নদী থেকে আহরণ করা পোনা ও পুকুরে উৎপাদন করা পোনা অবমুক্ত করে চাষ করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষের দিকে সেগুলো আহরণ করা হবে।

প্রকল্পের সহপরীক্ষক একই ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন পারভেজ বলেন, হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে ধস নামায় ও উপকূলের প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা আহরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকায় চিংড়িচাষিদের পোনাসংকটে পড়তে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ও রপ্তানিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রতিকূলতার কারণে চাষিরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এমন পরিস্থিতে তাঁরা বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় তাঁরা আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন। এখন চাষিরা পুকুরে পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারলে তা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

গবেষণার ওই প্রযুক্তি দ্রুত মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে গবেষকদের আহ্বান জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন। এতে চিংড়িচাষিরা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি।