পুকুর খনন করায় ডুবে থাকে সড়ক, ভোগান্তি দুই লাখ মানুষের

সড়কের আধা কিলোমিটার অংশে হাঁটুপানি জমে আছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যাওয়া–আসার সময় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রাজশাহীর পবা ও দুর্গাপুর উপজেলার দুই লাখ মানুষ। এই দুরবস্থা পবা উপজেলার একটি সড়কের। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় বৃষ্টি হলেই সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বন্যা হয়নি, বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকেছে। সড়ক পানিতে ডুবে আছে। সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা গ্রামে।ছবি: প্রথম আলো

সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চলাচল করে। মাছবাহী কমপক্ষে ৫০টি ট্রাক এই সড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অথচ এই সড়কের আধা কিলোমিটার অংশে হাঁটুপানি জমে আছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যাওয়া–আসার সময় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রাজশাহীর পবা ও দুর্গাপুর উপজেলার দুই লাখ মানুষ। এই দুরবস্থা পবা উপজেলার একটি সড়কের।


পবা উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করে পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক পথ বন্ধ করে দেওয়ায় বৃষ্টি হলেই ওই সড়কে পানি জমে থাকছে। দুই মাস ধরে সড়কের ওই অংশ পানিতে ডুবে আছে। এতে এলাকার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের আশরাফের মোড় থেকে পারিলা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে একটি সড়ক জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কানপাড়া এলাকায় চলে গেছে। প্রায় দুই লাখ মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে রাজশাহী জেলা শহর, রাজশাহী চিনিকল ও পবা উপজেলা সদরে যাতায়াত করে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের আশরাফের মোড় থেকে পারিলা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে একটি রাস্তা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কানপাড়া এলাকায় চলে গেছে। প্রায় দুই লাখ মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে রাজশাহী জেলা শহর, রাজশাহী চিনিকল ও পবা উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। পারিলা ইউনিয়নের দেশের একটি উল্লেখযোগ্য মাছ উৎপাদনকারী এলাকা। প্রতিদিন এই এলাকা থেকে সারা দেশে প্রায় ৫০ ট্রাক মাছ যায়। দুই মাস ধরে রাস্তাটির আধা কিলোমিটার এলাকা প্রায় হাঁটুপানিতে ডুবে রয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে মাছবাহী ট্রাকগুলো চলাচল করায় পাকা রাস্তাটি এখন ভেঙে একেবারে কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া এ কারণে সড়কের দুই কিলোমিটারও যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সড়কে জমে আছে পানি। সেই পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ। সম্প্রতি পবা উপজেলার পারিলা গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানির ভেতর দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যাচ্ছে। মানুষ পরনের কাপড় যাতে না ভিজে যায়, সে জন্য অটোরিকশা ভাড়া করছেন। আর যাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে পার হয়ে যাচ্ছেন, তাঁরাও পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছেন।


স্থানীয় লোকজন জানান, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী মাছ চাষের জন্য ধানি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করেছেন। সাধারণ মানুষ তাঁদের বাধা দিতে পারে না। আবার তাঁরা যখন পুকুর খনন করেছিলেন, তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।

আমি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কয়েকটি ট্রাকের মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে মাছ পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিই। কিন্তু এবার বর্ষাতে পারিলা বাজার থেকে আশরাফের মোড় (বাইপাস) পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৫০০ মিটার রাস্তা পুরো পানির নিচে ডুবে যাওয়াতে ট্রাকগুলো দিয়ে মাছ পরিবহন করতে পারছি না।
ইব্রাহীম আলী, পরিবহন ব্যাবসায়ী, পবা উপজেলা, রাজশাহী

স্থানীয় পরিবহন ব্যাবসায়ী ইব্রাহীম আলী বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কয়েকটি ট্রাকের মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে মাছ পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিয়ে থাকি। কিন্তু এবার বর্ষাতে পারিলা বাজার থেকে আশরাফের মোড় (বাইপাস) পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৫০০ মিটার রাস্তা পুরো পানির নিচে ডুবে যাওয়াতে এই রাস্তা দিয়ে আর আমার ট্রাকগুলো দিয়ে মাছ পরিবহন করতে পারছি না। এতে আমার ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন, এই পানি নিষ্কাশনের যেন দ্রুত ব্যবস্থা করা হয়।’


পারিলা গ্রামের আসাদুল্লাহ গালিব একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি (৩২)। তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়মিত এই রাস্তায় যেতে হয়। দুই মাস ধরে আমার দুর্ভোগের শেষ নেই। ঠিকমতো নিজের চাকরিস্থলে পৌঁছাতে পারছি না। মোটরবাইকে পার হওয়ার কোনো উপায় নেই। পার হতে গেলেই ঘটছে নানা রকম দুর্ঘটনা।’


স্থানীয় স্কুলশিক্ষক সুলতানা রাজিয়া (৩১) বলেন, ‘আমি এই রাস্তায় আমার কর্মস্থলে যাতায়াত করি। অনেক সময় ডাক্তার দেখাতেও যেতে হয়। রাস্তার এই অবস্থার কারণে আমি গত দুই মাস ডাক্তার দেখাতে যেতে পারছি না। পানির নিচে রাস্তা, ফলে গাড়িতেও যাওয়া যায় না, আবার হেঁটে পার হতে গেলে কাপড় ভিজে যায়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বলেন, মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। তারও কিছু করার উপায় নেই। এই পানি বের করার কোনো রাস্তা কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, এলাকার পানি বের হওয়ার রাস্তায় প্রথমে মাছ চাষের জন্য দুটি পুকুর খনন করা হয়েছিল। তারপর আরও সাত–আটটি পুকুর খনন করা হয়ে গেছে। পুকুরের পাড়ে এই এলাকার বৃষ্টির পানি বের হওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। পুকুরগুলোতে মাছ রয়েছে। এতগুলো পুকুরের পানি পাইপ দিয়েও বের করা যাচ্ছে না। আর এত পাড়ও কাটা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিমুল আক্তার বলেন, তিনি এখানে নতুন এসেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান তাঁকে জানাননি। এখন তিনি এলাকা পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।