পেছাল সম্মেলনের তারিখ বাড়ল অপেক্ষার প্রহর

সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ দিন পিছিয়ে কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে ২ জুলাই।

এক বছর বা দুই বছর নয়, একটি সম্মেলন পেতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দুই যুগের অধিক সময়। দীর্ঘ অপেক্ষার এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২১ জুন। আয়োজনের মাত্র চার দিন আগে কেন্দ্র থেকে আসে স্থগিতের ঘোষণা, একই সঙ্গে নতুন সময়। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ দিন পিছিয়ে কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে ২ জুলাই।

এই নিয়ে দলে মিশ্র আলোচনার সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও, একটি অংশ দেখছে বাঁকা চোখে।

তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে ২১ জুন সম্মেলন করা যাচ্ছে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই তারিখ পিছিয়ে নিতে হলো।

তবে দলের একটি সূত্র জানায়, সম্মেলনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ একাধিক নেতার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। মূলত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যস্ততার জন্যই সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মঈনুজ্জামান অপু জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। সভাপতি পদ পেতে আগ্রহীদের একজন তিনি। তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, হয়ে গেলে ভালো হতো। অপেক্ষা যত বাড়বে, ষড়যন্ত্রের জায়গাটিও বড় হতে পারে।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের মাধ্যমে কটিয়াদী আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ১৯৯৭ সালে। এ সময় ৬৭ সদস্যের কমিটির ৩০ জন মারা গেছেন। মৃতের তালিকায় আছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও। বেঁচে থাকা ৩৭ জনের মধ্যে বেশির ভাগ নিষ্ক্রিয়। অনেকে স্থায়ীভাবে দল ছেড়েছেন। কেউ কেউ প্রবাসজীবনে আছেন। হাতে গোনা কয়েকজন সক্রিয় থাকলেও তাঁরাও এখন বিভক্ত। এই অবস্থায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার তাগিদ অনুভব করছিলেন সবাই। তবে সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীর সংখ্যা। এরই মধ্যে সভাপতি পদে আগ্রহ দেখিয়েছেন সাতজন। সাধারণ সম্পাদকের তালিকায় আছেন নয়জন।

সভাপতি হতে চাওয়া ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোশতাকুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আকবর, মঈনুজ্জামান অপু, সাবেক ভিপি সিদ্দিকুর রহমান ভূইয়া, সহস্রারাম দুলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম, আচমিতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাস্টার ও কর্মী সুমন মল্লিক।

সাধারণ সম্পাদক পেতে আগ্রহীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি তারিকুল মোশতাক, সাবেক ভিপি দুলাল বর্মণ, সাবেক জিএস মুর্শিদ উদ্দিন, করগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ফকির, হাবিবুর রহমান ও দলটির কর্মী হুমায়ুন কবির।

নেতা-কর্মীরা জানান, কটিয়াদীর উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় করা হয়নি। কমিটির বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে অন্য দল থেকে আসা হাইব্রিড নেতা। এই অবস্থায় ওই সব নেতা দিয়ে প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সম্মেলনের দিন কেন্দ্রীয় নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে যাবেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই মতামত বর্তমান নেতৃত্ব ও পদপ্রত্যাশীরা মেনে নিয়েছেন।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীর আধিক্যের কারণ জানতে কথা হয় কামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রনেতারাও এখন বুড়া হয়ে গেছেন। পরের সম্মেলন না জানি আবার কবে হয়, এমন ধারণায় কেউ ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। গণহারে প্রার্থী হয়ে যাচ্ছেন। আমার ধারণা, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’