পৌরসভার বর্জ্যে দূষিত খাল

পঁচানালা খালের পানির রং পুরো কালো হয়ে গেছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ পানি সেচকাজে ব্যবহার করা যাবে না।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় পঁচানালা খালটির পানি দূষণে কালো হয়ে গেছে। গতকাল বাঙালিপুর ইউনিয়নে পাঠানপাড়া জলকপাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় পঁচানালা খালটির পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে ৫০০ হেক্টর জমিতে চলতি বোরো মৌসুমে সেচ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, পৌরসভার নালা-নর্দমা ও পয়োবর্জ্যের সংযোগ এই খালে এসে শেষ হয়েছে। তারা এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু প্রতিকার মিলছে না।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, শহরের উত্তর অংশ সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কয়া বিল থেকে পঁচানালার উৎপত্তি। এরপর সৈয়দপুর পৌর এলাকার ভেতর দিয়ে দক্ষিণে ২২ কিলোমিটার ঘুরে তা গিয়ে মিলেছে চিকলি নদীতে। খালটি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি মানুষ এ খালে মাছ ধরেন।

গতকাল রোববার বাঙালিপুর ইউনিয়নে পাঠানপাড়া জলকপাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানির রং কালো হয়ে গেছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ দুর্গন্ধে আশপাশের এলাকার লোকজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এতে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার নালা-নর্দমার পানি ও পয়োবর্জ্য এ খালের বিভিন্ন স্থানে ফেলা হচ্ছে। সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে বিসিক শিল্পনগর এলাকায় সেতুর নিচে দুই ধারে ‘মাস্টার ড্রেন’ (প্রধান নালা)। এর সংযোগ গিয়ে ঠেকেছে পঁচানালায়। মিল ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য সেখানে গিয়ে মিশছে। উপজেলা সড়কের পঁচানালা সেতুর নিচে শহরের বড় নর্দমা থেকে অব্যাহত নোংরা মিশছে খালের পানিতে। সাবেক ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান খাঁ বলেন, গত বছরও তাঁরা পঁচানালার পানি সেচকাজে ব্যবহার করেছেন। এবার এর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। পুরো পানি কালো হয়ে পড়েছে। এ পানি খেতে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম বলেন, পঁচানালার পানি সেচকাজে ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সৈয়দপুর বিভাগ জানায়, এই খালের দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার। ১৮২২ সালে তৎকালীন জমিদার পঁচা সরকার এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে খালটি খনন করেন। সৈয়দপুর পৌর এলাকার কিছু কৃষিজমি, বোতলাগাড়ি, কামারপুকুর ও বাঙালিপুর ইউনিয়নের সন্নিবেশিত এলাকার ৫০০ হেক্টর জমি পঁচানালার মাধ্যমে সেচসুবিধা পেয়ে থাকে।

পাউবো সূত্র আরও জানায়, পৌরসভার সব নালা–নর্দমার নোংরা পানি পঁচানালার খালে ফেলা হচ্ছে। ফলে দূষিত হয়ে পড়ছে খালের পানি। মরে যাচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণী। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল সরকার জানান, পঁচানালার পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি এনে পঁচানালার পানি শোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁরা সৈয়দপুর পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পঁচানালায় যেন নোংরা পানি ফেলা না হয়।

পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বলেন, পৌরসভায় প্রায় চার লাখ লোকের বসবাস। পৌরসভার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার গড়ে তোলা হচ্ছে। এটি চালু হলে পঁচানালায় আর নর্দমার পানি ফেলা হবে না।