প্রকল্পেই আটকে আছে লাউয়াছড়া বাইপাস

প্রকল্পটির প্রাক্‌-একনেক কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও একনেকে ওঠার অপেক্ষায় এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। দুই বছর আগে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

  • ‘সিলেট বিভাগের সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প নামে ১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

  • এই প্রকল্পে ‘লাউয়াছড়া বাইপাস সড়ক’ অন্তর্ভুক্ত আছে। ১৪ কিলোমিটার এই সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা।

  • উদ্যানের মধ্যে সড়ক থাকায় প্রতিবছর বানরসহ অর্ধশতাধিক বন্য প্রাণী মারা পড়ছে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে নির্মিত সড়ক
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ঢাকা-সিলেট রেললাইন এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে প্রতিবছর অর্ধশতাধিক বন্য প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। এই মৃত্যু ঠেকাতে প্রাণী সংরক্ষক ও পরিবেশবাদীরা অনেক দিন ধরে উদ্যানের ভেতর থেকে ওই রেলপথ ও সড়ক সরিয়ে ফেলার দাবি করে আসছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ‘সিলেট বিভাগের সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের মধ্যেই ‘লাউয়াছড়া বাইপাস সড়ক’ নির্মাণের বিষয়টি দুই বছর ধরে আটকে আছে।

এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ের সিলেট বিভাগের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল আহমদ আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পটি একনেকে উত্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আছে। আগে আমরাই ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছি। পরিকল্পনা কমিশন নতুন করে থার্ড পার্টি দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করাতে বলেছে। পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, থার্ড পার্টির ফিজিবিলিটি স্টাডি সংযুক্ত করে গত বছরের ২৭ অক্টোবর রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, সড়কটি লাউয়াছড়ার বাইরে দিয়ে যাবে। এটি একটি পর্যটন সড়ক হয়ে ওঠবে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বিকল্প সড়ক না হওয়ায় প্রায়ই বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে। আরও বন্য প্রাণী মারা যাবে।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে রেলপথে প্রায় ১০ মাস ট্রেন চলেনি। এই সময় লাউয়াছড়ার ভেতরে ট্রেন লাইনে বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনাও নেই। বন্য প্রাণীরা নির্বিঘ্নে রেলপথ পারাপার হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে উদ্যানের সড়ক পথে বিক্ষিপ্ত যানবাহন চলেছে। তাতে উদ্যানের ভেতর সড়কের বিভিন্ন স্থানে বন্য প্রাণী মারা গেছে।

২০২০ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত সড়কপথে দুর্ঘটনায় একটি চিতা বিড়াল, একটি মুখপোড়া হনুমান, একটি মেছো বিড়াল, একটি বানর এবং একটি চিত্রা হরিণ মারা যায়। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী ও ব্যাঙের মৃত্যু হয়। অনেক প্রাণী আহত হয়ে সড়কের পাশে ঝোপঝাড়ে মারা যায়। মারা যাওয়া প্রাণীর মধ্যে বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় অনেক

প্রাণীও থাকে। সড়কপথে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রায়ই বন্য প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় গাড়িচাপায় একটি দাঁড়াশ সাপের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবছর এ রকম অর্ধশতাধিক বন্য প্রাণী মারা পড়ছে।

এই বনের ভেতর দিয়ে গেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক। রেল ও সড়কপথের দুই পাশে উদ্যান। বন্য প্রাণীরা সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে আসা–যাওয়া করে। রাতেই বন্য প্রাণীর বিচরণ বেশি। তখন দ্রুতগামী যানবাহনের আঘাতে বেশির ভাগ বন্য প্রাণী মারা পড়ে। এই উদ্যানের ভেতর রাস্তা তৈরির সময় এত যানবাহন ছিল না। রাস্তাও এত মসৃণ ছিল না। এখন প্রতিদিন শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে ২০০ থেকে ৩০০ ছোট–বড় যানবাহন চলাচল করে। উদ্যানের ভেতরে এই সড়ক পড়েছে প্রায় সাত কিলোমিটার। রেল ও সড়কপথ উদ্যানের ভেতর থেকে সরিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণের দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে অাসছে মানুষ। বিকল্প সড়কের জন্য জরিপসহ কিছু তৎপরতাও চালানো হয়েছে। সর্বশেষ এলজিইডি থেকে প্রায় দুই বছর আগে বিকল্প সড়কের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ‘সিলেট বিভাগের সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প নামে ১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে ‘লাউয়াছড়া বাইপাস সড়ক’ অন্তর্ভুক্ত আছে। ১৪ কিলোমিটার এই সড়কের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশন এলজিইডির কাছে নতুন করে তৃতীয় সংস্থার মাধ্যমে লাউয়াছড়া বাইপাস সড়কের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার (ফিজিবিলিটি স্টাডি) প্রতিবেদন চেয়েছে। প্রতিবেদন তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।