প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তারের পর মুক্তি পেলেন নকল আসামি

প্রকৃত আসামি আবদুর রাজ্জাককে (ডানে) গ্রেপ্তারের পর মুক্তি পান নকল আসামি আবদুর রাজ্জাক সরদার
ছবি: সংগৃহীত

অপরাধী না হয়েও নাম ও ঠিকানার মিল থাকায় প্রায় ১১ ঘণ্টা হাজতবাস করেছেন আবদুর রাজ্জাক সরদার (৫৩) নামের ব্যক্তি। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় রাজশাহীর বাগমারা থানা-পুলিশ।

পরে গ্রাম পুলিশের এক সদস্য মামলার প্রকৃত আসামিকে ধরিয়ে দিলে মুক্তি মেলে রাজ্জাক সরদারের। তিনি উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বাজেকোলা গ্রামের গরিবুল্যা সরদারের ছেলে ও পেশায় রাজমিস্ত্রি।

উপজেলার ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এক সদস্য আবদুর রাজ্জাক সরদারকে গ্রেপ্তার করেন নারী নির্যাতনের একটি মামলায়। রাজ্জাক সরদারের স্বজনেরা জানিয়েছেন, এ মামলার প্রকৃত আসামি পাশের গনিপুর ইউনিয়নের বাজেকোলা গ্রামের আবদুর রাজ্জাক। মামলায় ইউনিয়নের নাম উল্লেখ ছিল না। আসামি, বাবার নাম ও গ্রামের নামে মিল থাকায় পুলিশ আবদুর রাজ্জাক সরদারকে গ্রেপ্তার করে।

আবদুর রাজ্জাক সরদারের স্ত্রী জিন্নাতুন নেসা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। রাত একটার দিকে পুলিশ পরিচয়ে তাঁর বাড়িতে দরজা খোলার জন্য বলা হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি দরজা খুলে দিলে স্থানীয় ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবুল কালাম তাঁর স্বামীর খোঁজ করেন।

জিন্নাতুন নেসা বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার কথা বলে পুলিশ তাঁর স্বামীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় ভুল হচ্ছে বলে জানালেও পুলিশ তাঁর কোনো কথা শোনেনি। রাতে স্থানীয় তদন্তকেন্দ্রর হাজতখানায় রাখার পর আজ শুক্রবার সকালে বাগমারা থানাহাজতে রাখা হয়।

নাম ও ঠিকানার মিল থাকার কারণে নাজেহাল হতে হয়েছে। আসল আসামির খোঁজ না পাওয়া গেলে হয়তো কারাবাস করতে হতো। তখন এর দায় কে নিত?
আবদুর রাজ্জাক সরদার, ভুক্তভোগী

এদিকে শুক্রবার সকালে আবদুর রাজ্জাকের স্বজনেরা মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানতে পারেন ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গনিপুর ইউনিয়নের বাজেকোলা গ্রামের রিনা নামের এক নারী মামলাটি করেন। মামলায় রিনার সাবেক স্বামী আবদুর রাজ্জাককে আসামি করা হয়েছে। ওই রাজ্জাকের বাবার নামও গরিবুল্যাহ।

আবদুর রাজ্জাক সরদারের ভাই রেজাউল করিম বলেন, মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া তৎকালীন উপপরিদর্শক, গনিপুর ইউপি চেয়ারম্যান, মামলার বাদীসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সহযোগিতা চান। সবাই আসল আসামির পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর পুলিশ কর্মকর্তাকেও বিষয়টি জানান। এরপর গ্রাম পুলিশের সহায়তায় আসল আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানা-পুলিশ।

গনিপুর ইউপির চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, মামলাটির প্রকৃত আসামি তাঁর এলাকার। তবে প্রথমে ধরা পড়েছিলেন ১৭ কিলোমিটার দূরের আরেক ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক। ওই ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর প্রকৃত আসামির সন্ধান দেন তিনি।

মনিরুজ্জামান বলেন, নির্যাতনের বিষয় নিয়ে এর আগে সালিস হওয়ার কারণে মূল আসামিকে সহজে শনাক্ত করতে পেরেছেন।

মুক্তির পর আবদুর রাজ্জাক সরদার বলেন, তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। নাম ও ঠিকানার মিল থাকার কারণে তাঁকে নাজেহাল হতে হয়েছে। আসল আসামির খোঁজ না পাওয়া গেলে তাঁকেই হয়তো কারাবাস করতে হতো। তখন এর দায় কে নিত?

ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবুল কালাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নিজের, বাবার ও গ্রামের নাম মিল থাকায় নকল আসামিকে ধরা হয়েছিল। সব মিল থাকায় ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় আনতে বাধ্য হয়েছিলেন।