প্রতিবন্ধক নেই, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

জামালপুর পৌর শহরের গেটপাড়া এলাকা ব্যস্ততম। এখানে লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক নেই।

জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের গেটপাড় এলাকায় লেভেল ক্রসিং না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে যানবাহন ও পথচারীরা। গত শুক্রবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর শহরের ব্যস্ততম গেটপাড় এলাকার রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ। শহরের প্রধান সড়কের এ ক্রসিংয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধক নেই। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েও এর প্রতিকার পাচ্ছে না জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম দিক দিয়ে দুটি লাইন চলে গেছে। একটি সরিষাবাড়ী, অন্যটি দেওয়ানগঞ্জের দিকে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ রেলপথ দুটি দিয়ে প্রতিদিন ১২ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম পাশেই গেটপাড় লেভেল ক্রসিং। এলাকাটিতে সব সময় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাক আর মানুষের জটলা লেগেই থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ক্রসিংয়ে রেলওয়ে গেট ব্যারিয়ার নেই। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের গেটপাড় এলাকাটি জনবহুল ও ব্যস্ততম। স্টেশনের খুব কাছেই পাশাপাশি দুটি লেভেল ক্রসিং। ক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধক (ব্যারিয়ার) না থাকায় গেটম্যান হাত দিয়ে যানবাহন আটকে রাখার চেষ্টা করছেন। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন কাছাকাছি চলে আসার পরও অনেক যানবাহন পারাপার হচ্ছে।

গেটম্যান মো. রিপন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় প্রধান সড়কটি ছিল এক লেনের। তখন একটি প্রতিবন্ধক ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে যানজট নিরসনে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ওভারপাস বানাতে গিয়ে সড়ক প্রশস্ত ও দুই লেন করা হয়। এ জন্য আগের প্রতিবন্ধক এখন আর কাজে আসছে না। ফলে ২৪ ঘণ্টা যান চলাচল করায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। ট্রেন আসার সময় যানবাহন আটকাতে আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়।’ ঝুঁকির মধ্য দিয়েই যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইজিবাইকচালক মো. মোস্তফা বলেন, সড়কের দুই পাশে ভূমি অধিগ্রহণের কারণে সড়কটি বর্তমানে বেশ প্রশস্ত। এ ছাড়া খানাখন্দে ভরা এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। সব সময় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ট্রেন আসে। ট্রেন খুব কাছে চলে আসার পরও লাইনের ওপর দিয়ে যানবাহন পার হতে থাকে। ট্রেন আসার সময় যানচালক ও পথচারীদের চিৎকার দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন গেটম্যান। যেকোনো সময় এ এলাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মো. আছাদ উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রেন চলাচলের সময় গেটপাড় এলাকার আগের ব্যারিয়ার দিয়ে প্রশস্ত হওয়া পুরো সড়ক বন্ধ করা যায় না। ফলে ওই পথ দিয়ে কোনো ট্রেন যাতায়াত করার সময় গেটে দায়িত্বরত গেটম্যানদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়কের অর্ধেকটায় গেট ব্যারিয়ার ফেলে অবশিষ্ট সড়কে দুই হাত তুলে অনেক কষ্টে তাঁদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সড়কে ডিভাইডার তৈরি করে দুই পাশে দুটি গেট ব্যারিয়ার স্থাপন করা খুবই জরুরি। এই গেট ব্যারিয়ারের জন্য আমাদের সব সময় উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হয়। আমি ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি।’

জামালপুর উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. রেজাউল হক বলেন, ‘রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের জন্য গেটপাড় এলাকায় সড়ক প্রশস্ত করায় আগের প্রতিবন্ধক এখন আর কাজে আসছে না। আমরা সড়কের মধ্যে একটি ডিভাইডার নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। সড়ক ডিভাইডারটি নির্মিত হলে সড়কটি ওয়ানওয়ে করা হবে। তখন দুই পাশে দুটি গেট ব্যারিয়ার স্থাপন করা হলে আর দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না।’