প্রতিবন্ধী নারীকে আটকে রেখে নির্যাতন, অবশেষে মৃত্যু

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ফেলানী বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূকে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে উদ্ধারের এক দিন পর গতকাল শনিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ফেলানী উপজেলার পাঁশুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। দুই বছর আগে পাশের নরদাশ গ্রামের কেচ্ছাশিল্পী আমজাদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এ ঘটনায় ফেলানীর বোন কোহিনুর বেগম বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ রাতেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গৃহবধূর স্বামী আমজাদ হোসেনকে (৫৩) গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের দেওয়া তথ্যমতে, পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী, সতিনের ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার গৃহবধূ ফেলানীকে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। স্বামী, সতিনের ছেলে ও ছেলের বউ তাঁর ওপর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ করা হয়। নির্যাতনে গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে একটি ঘরে আটকে রেখে বাড়ি থেকে তাঁরা পালিয়ে যান। গৃহবধূকে তিন দিন ধরে বাড়ির বাইরে দেখতে না পেলে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়।

গত শুক্রবার বিকেলে প্রতিবেশীরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় গৃহবধূকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেন। এ সময় তিনি কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। পরে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল গৃহবধূ মারা যান। পরে মুঠোফোনের মাধ্যমে গৃহবধূর স্বামীর কাছে খবর পৌঁছানো হয়। তিনি বাড়িতে ফিরলে পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে গৃহবধূর বোন কোহিনুরের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গৃহবধূর বোন কোহিনুর বেগম জানান, দুই বছর আগে আমজাদের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ফেলানীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তবে আমজাদর আগের স্ত্রীর ছেলে ও ছেলের বউ পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন। ফেলানী শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। তাঁর বোনের ওপর নির্যাতন চালানোর পর ঘরের ভেতরে রেখে তালা দিয়ে পালিয়ে যান আসামিরা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, ফেলানী প্রতিবন্ধী ছিলেন। তাঁর স্বামী আমজাদ কেচ্ছাগানের শিল্পী। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে গান করেন। এ কারণে প্রায়ই এলাকার বাইরে থাকেন। তাঁদের পরিবারে কী হয়েছে, তা জানেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, গৃহবধূ ফেলানীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালানোর পর আমজাদ বাড়ি থেকে চলে যান।