প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, জরিমানা করে মীমাংসা

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় প্রতিবন্ধী এক শিশুকে (৭) ধর্ষণের অভিযোগ গ্রাম্য সালিসে মীমাংসার ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা ও জুতাপেটা করে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করেন স্থানীয় মাতবরেরা। সম্প্রতি উপজেলার কাশোপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিশুটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ৬ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম ওরফে সুটকা (৪৫) নামের এক ব্যক্তি শিশুটিকে মাছ ধরার কথা বলে খালের পাড়ে একটি শর্ষেখেতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে গ্রামের লোকজন অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দেন। জিজ্ঞাসাবাদ করলে শিশুটি তার স্বজনদের ঘটনার বর্ণনা দেয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের কিছু লোক আশরাফুলের পরিবারের কাছে নালিশ দেন এবং বিষয়টি দ্রুত মীমাংসার জন্য চাপ দিতে থাকেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ৯ জানুয়ারি রাতে প্রতিবেশী আনোয়ারা বিবির নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে একটি সালিস বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে গ্রামের মাতবর কামাল হোসেন, সৈয়দ আলী সরদার, দীনু কবিরাজ পার্শ্ববর্তী গ্রামের নাসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে অভিযুক্ত আশরাফুল ধর্ষণের কথা স্বীকার করলে তাঁকে মাতবরেরা জুতাপেটা করেন এবং শিশুটির চিকিৎসার জন্য আট হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি আপস করেন।

শিশুটির মা বলেন, ‘হামার স্বামী কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালায়। হামরা গরিব মানুষ। গ্রামের মাতবরদের কথায় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা না করেই মেয়েকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করাইছি। পরে সালিসে সুটকাকে আট হাজার টাকা জরিমানা করেছে।’

ভুক্তভোগী শিশুটির দাদা বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। অত কোর্ট-কাচারি করার সামর্থ্য নাই। গ্রামের মণ্ডল-মাতবরদের কথার বাইরে গেলে হামাগের গ্রামতই থাকা হবে না। তাই যতই কষ্ট হোক, চুপ করে থাকা লাগবে।’

সালিস বৈঠকের অন্যতম আয়োজক আনোয়ারা বিবি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিজেদের মধ্যে হওয়ায় এবং দুই পক্ষেই রাজি থাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা সালিসে নিষ্পত্তি করে দেওয়া যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামের মানুষ, আইন বিষয়ে এত কিছু জানি না।’

নওগাঁ আদালতের আইনজীবী মহসিন রেজা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সালিসে আপসযোগ্য নয়। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার এখতিয়ার নেই। ভুক্তভোগী ও পরিবারের লোকজন চাইলে ধর্ষক এবং সালিসের মাতবরদের বিরুদ্ধে থানায় কিংবা আদালতে বিচার চাইতে পারবেন।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা তাঁদের জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেননি। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগী কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ চাইলে এখনো অভিযোগ নেওয়া হবে।