প্রধানমন্ত্রীর পর প্রথম টোল দিয়ে সেতু পার হয়েছি—দাবি দুই তরুণের

মোটরসাইকেল নিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে সবার আগে উঠতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চৌধুরী শামীম আফফান ও জালাল উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

নির্ঘুম রাত। লক্ষ্য তাঁদের একটাই, সবার আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ওঠা। সে লক্ষ্য পূরণে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টায় রওনা হন পদ্মা সেতুর উদ্দেশে। দেড় ঘণ্টায় চলে আসেন মাওয়া টোল প্লাজার কাছে।

কিন্তু পদ্মা সেতুতে ওঠার জন্য টোল প্লাজার দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তখন কয়েক শ যানবাহন। মহাসড়কে একপ্রকার যুদ্ধ করেই এসব যানবাহনকে টপকে সেতুতে ওঠার জন্য তাঁরা দুজন টোল দেন ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে। তাঁদের টোল টোকেন নম্বর ছিল ০০০১।

মোটরসাইকেল নিয়ে স্বপ্নের সেতুতে সবার আগে ওঠার দাবি করা দুই শিক্ষার্থী হলেন চৌধুরী শামীম আফফান ও জালাল উদ্দিন। তাঁরা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। থাকেন মাস্টারদা সূর্যসেন হলে। চৌধুরী শামীম আফফানের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর শহরে, জালালের বাড়ি পাবনা জেলায়।

দুই বন্ধু ১৫ মিনিটে পদ্মা সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তে আসেন। এই বিশেষ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে সেতুর সঙ্গে নিজেদের ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন। স্বপ্নের সেতুতে প্রথমবার সবার আগে উঠতে পেরে তাঁরা দুজন খুব খুশি।

পদ্মা সেতু পার হয়ে শামীম তাঁর ফেসবুকে টোল প্লাজা থেকে পাওয়া রসিদের ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরে টোলধারী হিসেবে পদ্মা সেতুতে প্রথম পদার্পণ।’

আজ সকাল ৫টা ৫১ মিনিটে মোটরসাইকেল শ্রেণিতে প্রথম টোল দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করেন চৌধুরী শামীম আফফান ও জালাল উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চৌধুরী শামীম আফফান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সবার আগে পদ্মা সেতুতে উঠব। কিন্তু লক্ষ্য পূরণ করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল আমাদের কাছে। রাত দুইটায় যখন মাওয়া প্রান্তে দেখি শত শত গাড়ি সেতুতে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে, তখন মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু আমার বন্ধু জালালের সাহসিকতায় আমরা এক্সপ্রেসওয়ের ৯ কিলোমিটার পেছনে গিয়ে সংযোগ সড়ক ধরে টোল প্লাজার সামনে চলে আসি। তখনো ভাবিনি, সবার আগে টোল দিতে পারব। কারণ, আমার মতো আরও বহু মোটরসাইকেল আরোহী সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ইচ্ছাটা আমাদের পূরণ হয়েছে। ভাগ্যক্রমে সবার আগে টোল দিতে পারি। পরে একটানে চলে যাই সেতুর মাঝখানে।’

চৌধুরী শামীম আফফান বলেন, ‘সেতুতে ওঠার পর মনে কী যে শান্তি পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। শুধু এটুকুই বলব, প্রধানমন্ত্রীর পর প্রথম টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়েছি, এটি স্বপ্নের সিঁড়িতে প্রথম পা দেওয়ার মতো অনুভূতি। এটি পদ্মা পারাপারে আগের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।’

টোল দিয়ে সেতুতে ওঠার পর চৌধুরী শামীম আফফান
ছবি: সংগৃহীত

শামীমের বন্ধু জালাল উদ্দিন পদ্মা সেতুতে ওঠার জন্য গতকাল শনিবার পাবনা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। জালাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পাবনায় ছিলাম। কিন্তু পদ্মা সেতুতে প্রথম নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে উঠব, এটাই ছিল লক্ষ্য। সেতুতে ওঠার পর আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল, বিশেষ কিছু জয় করেছি। এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।’