ফরিদপুরের লুটপাটের হাট

ফরিদপুর জেলার ম্যাপ

ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের জন্য সদরের হাটগুলো হঠাৎ করেই যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস হয়ে উঠেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এত দিন স্থানীয় সাংসদ খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম ভাঙিয়ে হাটগুলোতে লুটপাট চালিয়ে আসছিলেন তাঁরই অনুসারী কিছু নেতা। সেই দাপুটে নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে। গত বছর থেকে এলাকাছাড়া কয়েকজন। এতেই হাটগুলো থেকে প্রশাসনের তিন গুণ আয় হয়েছে।

ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নে গজারিয়া হাট ও গজারিয়া হাটের বর্ধিতাংশ নামে পাশাপাশি দুটি হাট রয়েছে। ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থাকার সুবাদে বাংলা ১৪২৫ থেকে ১৪২৭ সন পর্যন্ত পরপর তিন বছর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই এ হাট দুটির ইজারা পেয়েছেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসান খন্দকার ওরফে লেবি। বর্তমানে নাজমুল হাসান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির করা দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। ক্ষমতার দাপট আর আগের মতো নেই। তাই চলতি বছর (১৪২৮ সন) প্রতিযোগিতাপূর্ণ দরপত্রের মাধ্যমে ওই হাটগুলোর ইজারাপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছে জেলা প্রশাসন। তাতে দুটি হাটের মধ্যে একটি হাটের ইজারা এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৫২ গুণ এবং অপরটি বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ।

হাটবাজার ইজারার ক্ষেত্রে গত বছর থেকে এ বছরের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে ইজারাদারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। গত বছর দরপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার ব্যাপারে আমার মনে দুঃখবোধ কাজ করলেও আমার নিজের করার কিছু ছিল না।
মাসুম রেজা, ফরিদপুর সদরের ইউএনও

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গজারিয়া হাটের বর্ধিতাংশ গত বছর মাত্র ১২ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন নাজমুল। এবার সেই হাট ইজারা নিয়েছেন সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের গদাধরডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা রূপা বেগম—৬ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকায়। অপর দিকে গজারিয়া হাটটি গত বছর ৯ লাখ ৩ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন শহর আওয়ামী লীগের ওই নেতা। এ বছর ওই হাট ২৫ লাখ ১ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন পাশের নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা আক্কাস ফকির।

শুধু ওই হাট দুটিই নয়, এক বছরের ব্যবধানে ফরিদপুর সদরে হাটবাজারের রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। ১৪২৭ সনের ফরিদপুর সদরের ৪৬টি হাটের বিপরীতে দরপত্র জমা পড়েছিল ৫৪টি। আর সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। আর চলতি ১৪২৮ বাংলা বছরে ৪৬টি হাটের বিপরীতে দরপত্র জমা পড়েছে ২৪১টি। এ বছর ওই হাটগুলো ইজারা দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ টাকা; যা গত বছরের তুলনায় ৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা বেশি।

আরও পড়ুন

ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম রেজা বলেন, ‘হাটবাজার ইজারার ক্ষেত্রে গত বছর থেকে এ বছরের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে ইজারাদারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। গত বছর দরপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার ব্যাপারে আমার মনে দুঃখবোধ কাজ করলেও আমার নিজের করার কিছু ছিল না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে ফরিদপুরে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। সদর উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারও সে লুটপাটের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। সাংসদ খন্দকার মোশাররফের প্রভাবে যাঁরা শহর দাপিয়ে বেড়াতেন, তাঁরাই নামমাত্র মূল্যে হাটগুলো কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন।