ফরিদপুরে শ্রমিকদের আকস্মিক ধর্মঘটে বিপাকে যাত্রীরা, ৬ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার

ফরিদপুরে সকাল ১০টা থেকে আকস্মিক ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন শ্রমিকেরা। সোমবার দুপুরে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম গোয়ালচামট নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে একটি আঞ্চলিক সড়কে পাল্টাপাল্টি মারধরের জেরে আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহনশ্রমিকেরা। শ্রমিকদের আকস্মিক এই ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে ছয় ঘণ্টা পর বিকেল চারটা থেকে পুনরায় বাস চলাচল শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে বোয়ালমারী থেকে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস (ফরিদপুর-ব-০০৫৭) মাঝকান্দি যাচ্ছিল। বাসটি কাদেরদী কলেজের সামনে আসার পর যাত্রী ওঠানো নিয়ে এক মাহিন্দ্রচালককে গালাগালি করেন চালক ও সুপারভাইজার। কিছু দূরে আরেকটি মাহিন্দ্রকে যাত্রী ওঠাতে দেখলে মাহিন্দ্রচালককে মারধর করেন ওই বাসের সুপারভাইজার। তখন ওই মাহিন্দ্রচালক দ্রুত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মোড় মাঝকান্দিতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন জড়ো করেন। বাসটি মাঝকান্দি এলে ওই বাসের চালক রাসেল শেখ (৩৫) ও সুপারভাইজার সোলাইমান সরদারকে (৩২) মারধর করেন তাঁরা। এ ঘটনায় বাসের চালক ও সুপারভাইজার দুজন আহত হন। চালক রাসেলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরে ভর্তি করা হয়।

এ খবর ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে পরিবহনশ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি বাস রেখে সকাল ১০টা থেকে সব পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় ঢাকাগামী একটি বাসের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছিল। শ্রমিকেরা ওই কাউন্টারের ওপর চড়াও হন এবং জোর করে কাউন্টার বন্ধ করে দেন। এ সময় সড়কে চলাচল করা ২৫-৩০টি মাহিন্দ্রশ্রমিকেরা আটক করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকদের আকস্মিক এই ধর্মঘটের কারণে ঢাকা, খুলনা, মাগুরা, বরিশালগামী যাত্রীসহ ফরিদপুরের অভ্যন্তরীণ সব রুটের যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েন।

খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং মধুখালীর মাঝকান্দি এলাকা থেকে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ ওই মাহিন্দ্রচালককে আটক করে।

এদিকে বেলা তিনটার দিকে ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ডে বাস মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে মালিক, শ্রমিক ও ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতিতে জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে বক্তব্য দেন বাস মালিক গ্রুপের নেতা রাশেদুজ্জামান, কামরুজ্জামান সিদ্দিকি, ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জুবায়ের জাকির, সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মো. গোলাম আজাদসহ বিভিন্ন নেতা।

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক তুহিন লস্কর শ্রমিকদের আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শান্তি ও শৃঙ্খলায় কাজ করছে পুলিশ। মাহিন্দ্র কোন সড়কে চলবে আর কোন সড়কে চলবে না, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ১১ জুন সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে বিবদমান সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শ্রমিকনেতাদের ঘোষণার পর বিকেল চারটায় পুনরায় সব ধরনের বাস চলাচল শুরু হয়।

ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জুবায়ের জাকির বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে মহাসড়কে মাহিন্দ্রসহ থ্রি-হুইলার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে। এসব অবৈধ যানবাহনে যাত্রী বহন করায় বাসমালিক ও শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ঘটনাটি আঞ্চলিক সড়কে ঘটেছে জানালে তিনি বলেন, আঞ্চলিক সড়ক নয়, আঞ্চলিক মহাসড়ক। ওই সড়কেও এ-জাতীয় যানবাহন চলাচল করার বিধান নেই। তিনি বলেন, আকস্মিক ধর্মঘটে যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে, এ কথা সত্য। তবে এটাও বুঝতে হবে, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে শ্রমিকদের মধ্যে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘হঠাৎ ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু ঘটনাটি ঘটে গেছে। আমরা বাসমালিক, শ্রমিক, মাহিন্দ্রচালকদের নিয়ে আলোচনা করব। দেখব কার কতটুকু দায়, কার কী চাহিদা। ওই সভায় মহাসড়কের মর্যাদা আঞ্চলিক সড়ক পায় কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’