ফলনের হাসি দামে মলিন

বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা কম দাম পাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমেছে।

পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন চাষিরা। ফলন ভালো হলেও বাজারে পেঁয়াজের দাম কম। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি হাটে
ছবি: প্রথম আলো

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম কম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা কম দাম পাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমেছে। ফলে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকেরা।

অন্যদিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার বিষয়েও কৃষকেরা পারদর্শী না হওয়ায় মাঠ থেকে দ্রুত তোলার পর তা হাটে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সঠিকভাবে সংরক্ষণ পদ্ধতি জানা না থাকলে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের এমন সুযোগ নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কম দামে কিনে শহরে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়লেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার রবি মৌসুমে (শীতকালীন ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত) ১৩ হাজার ৭৩৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ জমির পেঁয়াজ উত্তোলন হয়ে গেছে। বেশির ভাগ পেঁয়াজ হাইব্রিড জাতের। ফলনও হয়েছে ভালো। কৃষকেরা মাঠে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫ থেকে ১৭ টাকা দরে বিক্রি করলেও জেলা শহরে ভোক্তা পর্যায়ে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ টাকা দরে। অথচ মাঝখানে মাত্র ১০ কিলোমিটারের ব্যবধান।

কুষ্টিয়ার কয়েকটি উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কৃষকের এক বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৭৫ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। প্রতি কেজি উৎপাদনে বীজ, কীটনাশক, পরিচর্যা, শ্রমিক ও পরিবহন বাবদ খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। কিন্তু বর্তমানে হাটে কৃষকেরা ১৫ থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এতে কেজিতে ১০ থেকে ১৮ টাকা লোকসান হচ্ছে কৃষকের। গত বছর প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।

কুমারখালী উপজেলার পান্টি ডিগ্রি কলেজ মাঠে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় হাট বসে। সেখানে গত শুক্রবার মানভেদে প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। জোতমোড়া গ্রামের কৃষক ফজুল শেখ ১১ মণ পেঁয়াজ হাটে নিয়েছিলেন। প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। যা উৎপাদন ব্যয় থেকে ১৫ টাকা কম। হাটে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ পেঁয়াজ কেনাবেচা হচ্ছে। এবার পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি ও বাইরের পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দাম কম।

হাটের ইজারাদার এইচ এম আবদুল্লাহ বলেন, শুক্রবার হাটে অন্তত পাঁচ হাজার মণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক ব্যবসায়ী আসেন। দাম কম থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ছিল না।

মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন ৬০০ টাকা দরে। এতে চাষিদের ক্ষতি হচ্ছে। এত কম দাম পেয়ে হতাশ তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (ফসল) বিষ্ণুপদ সাহা বলেন, দেশি জাতের পেঁয়াজের রস কম থাকে। সেগুলো ৭ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। তবে সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।