ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে আপত্তি এলাকাবাসীর
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। ফসলি জমিতে প্রকল্প স্থাপনে আপত্তি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গ্রামবাসীর দাবি, প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলি। সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের তিন হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অর্ধশিক্ষিত হওয়ায় তাঁদের অন্য কোথাও চাকরির সুযোগও নেই।
প্রকল্প স্থাপনের বিরোধিতা করে আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। গ্রামবাসীর পক্ষে সাজ্জাদ হোসেন, হবিবর রহমান, নবীছদ্দিন, জহিরুল ইসলামসহ ১১ জন কৃষক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে লিখিত দাবিগুলো জানান। দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে জমির খতিয়ান সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, প্রস্তাবিত জমি সত্যিকার অর্থে তিন ফসলি হলে সেখানে কোনো স্থাপনা করা হবে না। আর জমি বিক্রি না করলে কেউই জোর করে নিতে পারবে না। সমস্যা সমাধানে তিনি এলাকার সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করার আহ্বান জানান।
লিখিত আবেদনে বলা হয়, কৃষ্ণপুর গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বাস। পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। যার মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। এ ছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান ও অন্যান্য স্থাপনা। মাঠের জমিতে সব ধরনের ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়। গ্রামের প্রায় শতভাগ বাসিন্দা প্রত্যক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবন-জীবিকার স্বপ্ন দেখেন। ভূমিহীনরা অন্যের কৃষিজমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালান।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য ১৮০ একর জমি দখল (চাপ দিয়ে কেনা) নিতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট ঘোষণা, ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। স্থাপনা বা শিল্পায়নে ব্যবহার করা যাবে না। কৃষিজমি গ্রামবাসীর রুটিরুজির একমাত্র অবলম্বন হওয়ায় গ্রামবাসী জমি রক্ষায় গণস্বাক্ষর, অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধনসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামবাসীর জীবন-জীবিকার একমাত্র উৎস ফসলি জমি জীবন থাকতে কাউকে দেবেন না। গ্রামবাসীর মৃত্যুই হতে পারে জমি অধিগ্রহণ বা প্রকল্প স্থাপনের একমাত্র সমাধান। মো. নবীছদ্দিন বলেন, ‘কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর দুঃখ-দুর্দশা ও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারকে আবাদি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রক্রিয়া বন্ধে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাকির হুসাইনের মুঠোফোনে আজ রোববার রাত ৮টা ৪০মিনিটে কল করা হলে তিনি পরে ফোন করতে বলেন। কিন্তু এক ঘণ্টা পর কল করা হলে তাঁর মুঠোফোন সেট বন্ধ পাওয়া যায়।