ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে ২৫ বছর পর স্বজনদের কাছে ফিরলেন দুলাল

২৫ বছর পর ভাইকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন বড় বোন। আজ রোববার সরাইলের নোয়াগাঁওয়ে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে বেড়ান এক ব্যক্তি। জানতে চাইলে নাম–পরিচয় বলতে পারেন না। একদিন দুদিন করে এভাবেই কেটে গেছে প্রায় ২০ বছর। মানসিক সমস্যায় ভোগা দুলাল অবশেষে জানালেন তাঁর পরিচয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টের সূত্র ধরে তিনি ফিরলেন স্বজনদের কাছে।

দুলাল মিয়ার বয়স এখন ৪৫ বছর। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার উজিলাব এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেকের ছেলে। প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন বলে জানিয়েছে পরিবার। এরপর মা–বাবা আর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাননি। বর্তমানে দুলাল মিয়ার মা-বাবা বেঁচে নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে দুলাল মিয়াকে সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের হাটবাজারে ঘুড়ে বেড়াতে দেখছেন স্থানীয় লোকজন। যেখানে–সেখানে ঘুমিয়ে থাকতেন, খাবার পেলে খেতেন, না পেলে খেতেন না। সব সময় অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় ঘুরে বেড়াতেন। কেউ তাঁর নাম–ঠিকানা জানতে চাইলে বলতে পারতেন না। কয়েক দিন ধরে তাঁর আচরণের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন লক্ষ করেন স্থানীয় লোকজন। নিজে নিজেই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন হন। স্থানীয় লোকজন কথা বলে তাঁর নাম–ঠিকানা জানতে পারেন।

আজ রোববার দুলাল মিয়াকে তাঁর স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

এরপর গতকাল শনিবার দুপুরে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা উন্নয়নকর্মী (এনজিও কর্মকর্তা) সাদেকুর রহমান দুলাল মিয়ার পরিবারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট দেন।

পোস্টটি নজরে আসে স্বজনদের। এতে তাঁর বড় ভাই আবুল হোসেন (৪৮), বড় বোন মোসাম্মৎ বেগমসহ (৫০) ছয়জন সদস্য আজ রোববার হাজির হন তেরকান্দা গ্রামের ইউপি সদস্য ফজলুর রহমানের বাড়িতে। পরে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরীর উপস্থিতিতে দুলাল মিয়াকে তাঁর স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়।

দুলাল মিয়ার বড় ভাই আবুল হোসেন, বড় বোন মোসাম্মৎ বেগম, চাচা আফসার উদ্দিন (৫৫) ও মামাতো ভাই আলিমুজ্জামান দুলাল মিয়াকে পেয়ে মহাখুশি। আফসার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রক্তের বন্ধনের একটি লোককে পেয়ে আমরা মহাখুশি হয়েছি। এখনো তাঁর মধ্যে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। আমরা শিগগিরই তাঁর চিকিৎসা করাব।’

উন্নয়নকর্মী সাদেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পের, সামান্য একটু লেখায় আমি তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছে তুলে দিতে পেরে খুশি হয়েছি।’