বগুড়ায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও ধান সংগ্রহ অর্ধেক

ফাইল ছবি

বগুড়ায় বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানে সফলতা এলেও ব্যর্থ হয়েছে ধান সংগ্রহ অভিযান। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। তবে জেলায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ শতাংশ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মে থেকে জেলায় বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। শেষ হয় ৩১ আগস্ট। এ বছর জেলায় ২৭ টাকা কেজি দরে ২৫ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন ধান ও ৪০ টাকা কেজি দরে ৬০ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ৩৯ টাকা কেজি দরে আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১১ মেট্রিক টন।

খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ধান সংগ্রহ হয়েছে ১৪ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ শতাংশ। ৬০ হাজার ৪৯০ টন সেদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৫৯ হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১১ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

চাল সংগ্রহের জন্য জেলা খাদ্য বিভাগ ৫২টি অটো রাইস মিল এবং ১ হাজার ৪৫২ হাসকিং মিলের সঙ্গে চুক্তি করে। ১ হাজার ৪৮৭টি মিলের মধ্যে ১৭টি হাসকিং মিল সরকারি গুদামে চাল দেয়নি। মিলাররা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় তাঁরা চাল দিতে পারেননি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, এবার বগুড়ার প্রতিটি উপজেলায় কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে ধান ক্রয় করা হয়েছে। বড় কৃষকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৩ টন, মাঝারি কৃষকের মধ্য থেকে ২ টন ও ক্ষুদ্র কৃষকের কাছ থেকে ১ টন করে ধান কেনা হয়।
বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং রাইস মিল মালিক সমিতি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি এ টি এম আমিনুল হক বলেন, বাজারে ধানের দাম ছিল প্রতি মণ ৮৮০ টাকা। বাজারে চালের দাম ছিল গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। অথচ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে ৪০ টাকা কেজি দরে মিলারদের চাল দিতে হয়েছে। এতে প্রতি কেজি চালে ৫ টাকা হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি লোকসান হয়েছে মিলারদের। ধানের বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় কৃষকেরাও গুদামে ধান দেননি।

ধানের উৎপাদন এলাকা হিসেবে খ্যাত বগুড়ায় টানা কয়েক মৌসুম ধরেই সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। কারণ জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশ্রাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিগত তিন মৌসুমে ধানের বাজার মূল্য অনেক বেশি। এতে কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন। তবে খাদ্যনিরাপত্তা মজুত কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এবারও ধানের বাজার মূল্য বেশি থাকায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

মো. আশ্রাফুজ্জামান আরও বলেন, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কারণে বাজারে ধানের চাহিদা তৈরি হয়। এতে বাজার চাঙা থাকে। ফলে কৃষক লাভবান হন। সরকার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা না করলে ধানের বাজার মূল্যে ধস নামবে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, করোনা মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যেও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে চাল সংগ্রহ অভিযান সফল করেছেন।