বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের অন্য রকম মিলনমেলা

বগুড়া জিলা স্কুলের ২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে টি টেন ক্রিকেট আয়োজনে অংশ নেন ১৯৬৩ ব্যাচের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী শওকত হায়াত খান
প্রথম আলো

এক প্রান্তে বল করছে এক নবীন শিক্ষার্থী, অন্য প্রান্তে ব্যাট হাতে আছেন ৭৫ বছর বয়সী একজন। গ্যালারি থেকে আসছে তুমুল করতালি আর হইচই। এই চিত্র ১৬৭ বছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বগুড়া জিলা স্কুল মাঠের। করোনাকালে ঘরবন্দী জীবনের অবসাদ কাটাতে এই বিদ্যাপীঠে তিন মাস ধরে চলছে আন্তবর্ষ ফুটবল ও ক্রিকেটের জমজমাট আসর। এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক মিলনমেলা।

শনিবার বগুড়া জিলা স্কুল মাঠে ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শওকত হায়াত খান। তিনি ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘দর্পচূর্ণ’সহ সত্তরের দশকে বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি এই স্কুলের ১৯৬৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘জিলা স্কুল ক্রিকেট টিমে খেলতাম। খেলতাম আন্তস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টেও। পূর্ব পাকিস্তান সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ১৯৬৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর জিলা স্কুলের মাঠ ছাড়তে হয়। সরকারি আজিজুল হক কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় মাঝেমধ্যে খেলতে এসেছি এ মাঠে। এরপর আর আসা হয়নি। দীর্ঘ ৫৭ বছর পর জিলা স্কুল মাঠে ব্যাট-বল হাতে। অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। একটু সময়ের জন্য হলেও শৈশবে ফিরে গেছি। চমৎকার এ আয়োজন। এ শুধু খেলা নয়, নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের মিলনমেলাও।’

উৎসবমুখর এই আয়োজনের সাফল্য কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। টুর্নামেন্টের কোনো এক ম্যাচে তিনি অংশ নিতে পারেন বলে আয়োজকেরা জানান।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এপ্রিল থেকে বগুড়ায় করোনার ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার কারণে শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়ে ঘরবন্দী। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ও কর্মজীবী জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বগুড়ায় ফেরেন। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আগস্টে জিলা স্কুলের ২০১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। এই আয়োজনের নাম দেওয়া হয় জিলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক প্রয়াত তাজমিলুর রহমানের নামে ‘তাজমিলুর রহমান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’।

এতে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২১ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ১৯টি দল অংশ নেয়। প্রতি শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্ট দেখতে জিলা স্কুলের মাঠে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীর ঢল নামে। খেলা শেষে চলে ব্যাচভিত্তিক পিকনিক, বারবিকিউ পার্টি। এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষ হতে না হতেই ২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে বগুড়া জিলা স্কুল টি–টেন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সিজন-৩। আয়োজনটি ১০ ওভারের। এ আয়োজনের সিজন-১ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় টুর্নামেন্টের সিজন-২।

আয়োজকদের অন্যতম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইসুল ইসলাম এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন (ব্যাচ ২০১৩) বলেন, এবারের টুর্নামেন্টে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ব্যাচের ৪১টি দল অংশ নিচ্ছে। একেক দলের নামকরণও করা হয়েছে ব্যতিক্রম। যেমন মুশফিকুর রহিমের ২০০৩ ব্যাচের নাম দেওয়া হয়েছে স্বপ্নিল-৩, আয়োজকদের দল ২০১৩ ব্যাচের নাম তেরো, ১৯৯৪ সালের ব্যাচের নাম সার্কেল-৯৪। এভাবে ব্যাচের আগে দুরন্ত, দুর্বার, অদম্য নানা নাম যুক্ত করে দলের নামকরণ করা হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, প্রতিদিন শারীরিক দূরত্ব মেনে ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদিন দুটো করে ব্যাচ টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। এখন চলছে ‘টপ-১৬’ দলের খেলা।