বঙ্গবন্ধু হল খুলে দেওয়ার দাবিতে প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষরা অবরুদ্ধ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু‌ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ। দুপুরে ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সামিউল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সহকারী প্রাধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হলের ভেতরে ঢুকলে শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে হলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটা বাতিল করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই হল বন্ধ করা যাবে না। এ ছাড়া দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ারও দাবি জানান তাঁরা।

গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। তখন উপাচার্য জানান, আজ দুপুর ১২টার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে।

উপাচার্যের ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলীর হলের ছাত্ররা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ মিছিল থেকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এ অবস্থায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম কয়েকজন সহকারী প্রাধ্যক্ষকে নিয়ে হলের ভেতরে যান।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, হলের ভেতরে প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে বেশ কিছু শিক্ষার্থীও আটকা পড়েছেন। প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষরা সম্মেলনকক্ষে বসে আছেন। তবে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কতজন সহকারী প্রাধ্যক্ষ অবরুদ্ধ আছেন, সেটা শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, হলে প্রাধ্যক্ষ কিংবা সহকারী প্রাধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখার তথ্য সঠিক নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।

আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গতকালও সকালে ছাত্রীরা গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে উপাচার্য তাঁর কার্যালয় থেকে বের হয়ে ডিনদের এক সভায় যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়লে তাঁর সঙ্গে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাঁকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে স্লোগান দিতে শুরু করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ উপাচার্যকে মুক্ত করতে ভবনের ভেতরে ঢুকতে চাইলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে তাঁর বাসভবনে নিয়ে আসে।

পরে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেন। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে এবং উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এখন আন্দোলন চলছে।