পটুয়াখালীর কলাপাড়া
বন্যায় ভরসা ‘মুজিব কিল্লা’
মাটির কিল্লা বিশালাকায় একেকটি মাটির ঢিবি। সমতল থেকে ১১ ফুট উঁচু হয় একেকটি কিল্লা। এর ভিত্তি গড়া হয় মাটি ও বালু ফেলে।
উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে জানমাল রক্ষার্থে বেশ কিছু মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে কিল্লাগুলো নির্মিত হয়। সে সময় এগুলো ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিতি পায়। পরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিল্লাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু কিছু কিল্লা ও তার আশপাশের জমি বেদখল ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
সম্প্রতি এসব কিল্লার সংস্কার ও উন্নয়ন শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত হয়েছে দুটি মাটির কিল্লা। এ দুটিসহ মোট পাঁচটি কিল্লা ২৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
কিল্লার কিছু অংশে হয়তো ব্লক দেওয়া যায়নি। বর্ষায় যাতে মাটি ধুয়ে নেমে না যায়, আমরা সেসব অংশে আপতত ঘাস বিছিয়ে দেব। পরে ব্লক দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
মাটির কিল্লা আদতে বিশালাকায় একেকটি মাটির ঢিবি। সমতল ভূমি থেকে ১১ ফুট উঁচু হয় একেকটি কিল্লা। এর ভিত্তি গড়া হয় মাটি ও বালু ফেলে। ৪০–৫০ হাজার বর্গফুটের একেকটি কিল্লার চারপাশ সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বাঁধানো হয়। অনেকটা নদীর পাড় বাঁধানোর মতো। দুর্যোগে কিল্লায় আশ্রয় নেওয়া মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য রয়েছে থাকার পৃথক ব্যবস্থা, একতলাবিশিষ্ট ভবন।
এসব কিল্লার সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ২০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১১টি কিল্লার কাজ চলছে। আরও সাতটি কিল্লার দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন।
সম্প্রতি সরেজমিন কথা হয় কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের নেওয়াপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শাহ আলম তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কিল্লাডা হওনে মোগো আশ্রয় নেওয়ার জায়গা হইল। ঝড়-বইন্যা হইলে অ্যাহন মোরা এই কিল্লার ওপরেই গরু-বাছুর লইয়া আশ্রয় নেতে পারমু।’
নেওয়াপাড়া ছাড়াও টিয়াখালী ইউনিয়নের পূর্ব টিয়াখালী গ্রামেও আরেকটি মাটির কিল্লা হয়েছে। সংস্কার না হওয়ায় পুরোনো যেসব কিল্লা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল, সেসব কিল্লার ওপরই এখন মাটি ফেলে উঁচু করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কাওসার আলম জানান, ২৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স করে এসব কিল্লার উদ্বোধন করবেন। ওই দিন কলাপাড়ার দুটি কিল্লা ছাড়াও কক্সবাজারের চকোরিয়া উপজেলার ছৈনাম্মারঘোনা, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরদরবেশবাজার ও চরকাজী মোকলেস মুজিব কিল্লারও উদ্বোধন হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘এ’ ও ‘বি’—এ দুই ধরনের মুজিব কিল্লা নির্মিত হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কিল্লার মোট আয়তন ৪২ হাজার ২২০ বর্গফুট। ‘বি’ ক্যাটাগরির কিল্লার আয়তন ৫০ হাজার ৪০০ বর্গফুট। ‘এ’-তে নির্মিত এক তলাবিশিষ্ট অবকাঠামোর দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট। ‘বি’-তে এক তলাবিশিষ্ট অবকাঠামোর দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট ৬ ইঞ্চি।
প্রতিটি কিল্লা সমতল থেকে ১১ ফুট উঁচু। ছোট কিল্লার নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বড় কিল্লার ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, নেওয়াপাড়া গ্রামের কিল্লার তিন দিকে মাটির ওপর ব্লক বসানো হয়েছে। দক্ষিণ দিকে ব্লক দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘কিল্লার কাজ বাস্তবায়নে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। আমরা সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কিল্লার কিছু অংশে হয়তো ব্লক দেওয়া যায়নি। বর্ষায় যাতে মাটি ধুয়ে নেমে না যায়, আমরা সেসব অংশে আপতত ঘাস বিছিয়ে দেব। পরে সেসব অংশেও ব্লক দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’