বন্য হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষায় আধা পাকা ধান কাটছেন কৃষক

ফলন ভালো হলেও বন্য হাতির ভয়ে আধা পাকা ধান কাটছেন কৃষকেরা। গতকাল সোমবার সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দরের চা–বিক্রেতা শহর আলী (৮০)। ধারদেনা করে নাকুগাঁও সীমান্তে ১০ শতক জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন তিনি। ফলন ভালোই হয়েছে। ধান পাকতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। কিন্তু তার আগেই গতকাল সোমবার ছেলেকে নিয়ে আধা পাকা ধান কেটে নেন শহর আলী। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী করমু আত্তির (হাতি) ডরে আধা পাহা ধান কাডুন লাগতাছে। এ ছাড়া তো কোনো উপায় নাই।’

শুধু শহর আলী একা নয়, তাঁর মতো উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকার অর্ধশতাধিক প্রান্তিক কৃষক বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। হাতির দলকে প্রতিরোধ করতে তাঁরা ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

বন বিভাগ ও কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও গ্রামের ভারতের সীমান্ততার ঘেঁষা ৯০ একর জমিতে অর্ধশতাধিক প্রান্তিক কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু ওই জমির পশ্চিমে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের চকিদার টিলায় পাহাড়ি জঙ্গলে এক সপ্তাহ ধরে ২৫ থেকে ৩০টি বন্য হাতির দল অবস্থান করছে।

গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাহাড় থেকে নাকুগাঁও এলাকায় হাতির পাল ধানখেতে নেমে আসে। দ্রুত টের পেয়ে এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে প্রতিরোধ করেন। পরে হাতির পালটি আবার জঙ্গলে চলে যায়। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের জমি থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে আসছেন।

নাকুগাঁও গ্রামের মোকছেদ আলী বলেন, ‘আমি ৩০ শতক জমিতে বোরো ধান করেছি। ফসল পাকতে ও কাটতে আরও এক সপ্তাহ সময় দরকার। কিন্তু হাতির আক্রমণের ভয়ে নিরুপায় হয়ে আধা পাকা ফসল কাটতে বাধ্য হচ্ছি।’

নাকুগাঁও গ্রামের প্রান্তিক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের সাড়ে ছয় শতক জমিতে ধান চাষ করছি। ফলনও ভালো অইছে, কিন্তু প্রতি রাতে আত্তি অত্যাচার করে। সবাই রাত জাইয়া পাহারা দেই। শরীলে আর কুলায় না, তাই নিরুপায় অইয়া আধা পাহা ধান কাইটা বাড়ি আনতাছি। বেশি আশায় পরে সব হাতির পেডে যাইব।’

বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, হাতির দলটি এক সপ্তাহ ধরে চকিদারটিলা ও ডালুকোনা পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। প্রতি রাতে ধান খেতে হানা দেয়। তাই ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের খেত থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।