বরগুনায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হয়। এতে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বড়ইতলা ফেরিঘাট এলাকায়
ছবি: মোহাম্মদ রফিক

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের তোড়ে বরগুনার নদ-নদীতে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। স্বল্প উচ্চতার বেড়িবাঁধের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ও নাজুক বাঁধের কারণে এসব এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সদর উপজেলার বড়ইতলা, পশ্চিম গোলবুনিয়া, মাঝেরচর, বড়ইতলা ফেরিঘাট, পুরাকাটা ফেরিঘাট এবং তালতলী উপজেলার খোট্টারচর এলাকার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকি, কূপধোন, লালদিয়াসহ জেলার আমতলী, বামনা, বেতাগী উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জোয়ারের কারণে বরগুনার বাইনচটকি, বড়ইতলা ও পুরাকাটা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কসহ গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচলও বন্ধ।

সরেজমিনে বরগুনার পশ্চিম গুলবুনিয়া, বড়ইতলা ও ঢালভাঙা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার নদীতীরের লোকালয় সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। ভেসে গেছে এসব এলাকার বেশ কিছু পুকুরের মাছ।

পাথরঘাটা পূর্ব রুপদোন এলাকার বাসিন্দা মো. শামসুল হক বলেন, এই এলাকায় জোয়ারের চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে পড়েছে। এতে তাঁর বসবাসের ঘরটিও ধসে গেছে।

বড়ইতলা এলাকার বাসিন্দা সোহাগ বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় বাঁধ বলতে কিছু নেই। উঁচু জোয়ার হলে আমাদের এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার হাজারো মানুষের ঘরে আজ রান্না হবে না।’

পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা হীরা বলেন, বরগুনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে পদ্মা এলাকা। এখানে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। জিও ব্যাগ দিয়ে এখানে নদীর পানিপ্রবাহ প্রতিহত করা চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। এখান থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকে অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে ফসলের মাঠসহ পুকুর ও মাছের ঘের।

বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মাহতাব হোসেন বলেন, বরগুনার নদ-নদীতে আজ বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলীয় নদ-নদীতে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।