বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বরগুনা জেলার সব সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীকে কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলায় সাতটি কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি ৪৫টি চিকিৎসা দল প্রস্তুত করা হয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সভায় জেলার সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১৮৫টি, আমতলী উপজেলায় ১১১টি, তালতলী উপজেলায় ৫৩টি, পাথরঘাটা উপজেলায় ১২৪টি, বেতাগী উপজেলায় ১১৪টি ও বামনা উপজেলায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের সমন্বিত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ও স্লুইসগেট রক্ষণাবেক্ষণ, শুকনা খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়–পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে গভীর নলকূপ মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়–পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নৌযান ও মোটরযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরগুনার সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে হতাহত মানুষের চিকিৎসার জন্য জেলায় ৪৫টি চিকিৎসা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপপরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উদ্ধার অভিযানের জন্য জেলায় ১২ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে সিপিপির ১ হাজার ১৬০ জন, রেড ক্রিসেন্টের ২০০, উপকূলীয় উন্নয়ন সংস্থা জাগো নারীর ২৫০, ব্র্যাকের ২০০ এবং রোভার স্কাউটসের ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। ইতিমধ্যেই এসব স্বেচ্ছাসেবী অধিকাংশ নদী ও সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় প্রচারণার কাজে নিয়োজিত।
বরগুনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়–পূর্ববর্তী সহায়তার জন্য ইতিমধ্যেই জেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ১ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী এ টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমাদের কাছে এই মুহূর্তে ৩৫৭ মেট্রিক টন চাল, ছয় লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ছয় লাখ টাকার গোখাদ্য মজুত রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৪৫টি চিকিৎসা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাড়ে ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়–পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উদ্ধার অভিযানের জন্য নৌযান ও মোটরযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলার ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত নগদ অর্থসহ খাদ্যদ্রব্য মজুত রয়েছে।’