বরিশালে ইউএনও-ওসির বিরুদ্ধে দুটি মামলার আবেদন, তদন্তের নির্দেশ আদালতের

বরিশালে ইউএনওর বাসায় হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি
ফাইল ছবি

বরিশালে ইউএনওর বাড়িতে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি, এসআইয়ের বিরুদ্ধে করা পৃথক দুটি মামলার আবেদন আমলে নিয়ে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ এ নির্দেশ দেন। মামলার অভিযোগ দুটি তদন্ত করে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পিবিআইয়ের বরিশালের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের বেঞ্চ সহকারী কামরুল হাসান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সকালে বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম ও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল মল্লিকের নামে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।

বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, দুটি মামলার আবেদনেই ইউএনও মুনিবুরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার আবেদনে ইউএনও মুনিবুর রহমানকে আসামি করার পাশাপাশি তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচজন আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। তবে তাঁদের নাম উল্লেখ নেই। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার ওই দুই আবেদনে বলা হয়, নগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য সিটি করপোরেশনের সভায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে গেলে ইউএনওর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা বাধা দেন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ঘটনাটি জেনে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। এ সময় ইউএনও এবং তাঁর আনসার সদস্যরা মেয়রকে হত্যার উদ্দেশে গুলি ছোড়েন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববর্ম তৈরি করে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে রক্ষা করেন। এতে মেয়রের বেশ কয়েকজন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

১৮ আগস্ট রাতে নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণ নিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেও হামলার অভিযোগ করা হয়।

ইউএনও মুনিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসেন। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাঁদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তাঁরা গালিগালাজ করে। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।’

এমন অভিযোগে বৃহস্পতিবার ইউএনও মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ৭০ থেকে ৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এদিকে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শাহজালাল মল্লিক বাদী হয়ে পৃথক অপর একটি মামলা করেন। দুটি মামলায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়।
এদিকে ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলার আবেদন করা হলেও রোববার সকাল থেকে বরিশাল নগরে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত আছে। নগরের কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন

দুই মামলায় গ্রেপ্তার ১৮ আসামির জামিন নামঞ্জুর

ইউএনওর বাসভবনে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী ইউএনও মুনিবুর রহমান ও অপর মামলার বাদী এসআই শাহজালাল মল্লিক। ইউএনও এবং পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার ২১ আসামির মধ্যে ১৮ আসামির জামিন চেয়ে আজ রোববার আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন। সেই সঙ্গে আহত আসামিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন