বরিশালে ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ পাঙাশ

নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীতে ইলিশের পাশাপাশি অনেক পাঙাশ ধরা পড়ছে। প্রতি কেজি পাঙাশ ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মেঘনা ও সংলগ্ন শাখা নদীতে প্রচুর পাঙাশ ধরা পড়ছে। মঙ্গলবার বরিশালের পাইকারি পোর্ট বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর মেঘনা, তেঁতুলিয়াসহ আশপাশের নদ-নদীতে প্রচুর পাঙাশ ধরা পড়ছে। সাধারণত এ নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পর জেলেদের জালে ইলিশই বেশি পাওয়ার কথা। কিন্তু বরিশালের বাজারে গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবারও ইলিশের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক পাঙাশ এসেছে।

হঠাৎ করে পাঙাশের আধিক্য দেখে জেলে ও ব্যবসায়ীরা অনেকটা হতবাক। কারণ, আগে দক্ষিণের নদ-নদীতে প্রচুর পাঙাশ পাওয়া যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্বল ব্যবস্থাপনা, জলাশয় হ্রাস, প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে এই মাছ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ প্রকল্পের গবেষকেরা ২০১৭ সালে পাঙাশের ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। এতে বলা হয়, চাঁইয়ের মতো ধ্বংসাত্মক ফাঁদ ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ পাঙাশের পোনা নিধন করায় এর বংশবিস্তারে মারাত্মক প্রভাব পড়ে।

ইকোফিশের গবেষকেরা ২০১৭ সালে ভোলা ও পটুয়াখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত তেঁতুলিয়া নদীতে পাঙাশের ওপর একটি সমীক্ষা চালান। এই গবেষণা কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিলেন ইকোফিশের গবেষক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী। এ সময় তাঁরা ১২টি স্থানের সন্ধান পান। এসব স্থান পাঙাশ বা ক্যাটফিশ-জাতীয় মাছের প্রজননক্ষেত্র। এগুলো হচ্ছে হাদির চর, চরগুণী, মাঝের চর, পাতার চর, চর বোরহান, চর কলমি, চর কাজল, বনতলী, চর মন্তাজ, চর বিশ্বাস, ছোট বাইশদিয়া ও চালিতাবুনিয়া। এসব এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি জেলে চক্র চাঁই দিয়ে বিপুলসংখ্যক ছোট পাঙাশ ধরে। এই চক্রে আছেন ২০ জন জেলে।

বাঁশের ছোট কঞ্চি দিয়ে তৈরি এসব চাঁইয়ে ছোট আকারের পাঙাশের বিপুল পোনা ধরা পড়ে, যা ৪০টিতে ১ কেজি ওজন হয় এমন আকারের। প্রতিদিন একেকজন জেলের চাঁইয়ে এমন আকারের অন্তত ১২০ কেজি পাঙাশের পোনা নিধন হচ্ছে। ফলে এই ২০ জন জেলে চাঁই দিয়ে বছরের ছয় মাসে অন্তত দুই কোটি পাঙাশের পোনা নিধন করছেন। এসব ছোট পোনা বাজারে নদীর ট্যাংরা বলে বিক্রি করেন তাঁরা। ট্যাংরা ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটারের বেশি বড় হয় না।

ইকোফিশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঙাশের এসব প্রজননক্ষেত্র যদি রক্ষা করা যায়, তবে প্রায় বিপন্ন এই গোত্রকে আবার ব্যাপকভাবে নদীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যদিও সরকার নভেম্বর

থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৩০ সেন্টিমিটারের নিচে পাঙাশের পোনা ধরা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এই আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও জেলেদের মধ্যে এই আইন সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায়, পোনা নিধন অব্যাহত রয়েছে।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের কয়েকজন আড়তদার বলেন, মঙ্গলবার থেকে ইলিশের ট্রলারে আসছে নদীর পাঙাশ। দুই দিন ধরে ক্রেতারা ইলিশের বদলে পাঙাশ বেশি কিনছেন। জেলেদের বরাত দিয়ে আড়তদারেরা বলেন, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, কালাবদর, লতা, তেঁতুলিয়া নদীতে এখন ধরা পড়ছে প্রচুর পাঙাশ।

পোর্ট রোড মাছের আড়তের মালিক জহির সিকদার বলেন, মেঘনা ও শাখানদীতে জেলেদের জালে প্রচুর পাঙাশ ধরা পড়ছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে আড়তে ইলিশের চেয়ে পাঙাশ বেশি এসেছে।