বরিশালে পরিবহন খাত চাঙা

রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি বাসগুলোকে শীতাতপ সংযোজনের পাশাপাশি উন্নত পরিষেবা দেবে।

  • ২৬ জুন থেকে বিআরটিসির বরিশাল-গুলিস্তান রুটের বাস চলবে।

  • বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে।

পদ্মা সেতু ঘিরে বরিশাল অঞ্চলের পরিবহন খাতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। আধুনিক ও উন্নতমানের বাস চালুর উদ্যোগও চলছে জোরেশোরে। পিছিয়ে থাকছে না রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিও। সংস্থাটি তাদের বাসগুলোকে শীতাতপ সংযোজনের পাশাপাশি আরও উন্নত পরিষেবা দিতে প্রস্তুত করছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে বাসের সংখ্যাও।

বরিশাল থেকে আগে বিআরটিসির বাসগুলো কাঁঠালবাড়ী পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করত। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে সরাসরি দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঢাকা পৌঁছে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিআরটিসি। এরই মধ্যে ঢাকার গুলিস্তানে বিআরটিসি বরিশাল কাউন্টারের কাজও শুরু করেছে। নতুন বাস সংযোজনের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি পুরোনো বাসগুলোও মেরামত করা হচ্ছে। ২৬ জুন থেকেই চলবে বরিশাল-গুলিস্তান রুটের এই বাস।

বিআরটিসি বরিশাল কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস ডিপোসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রতিদিন ১৫টি বাস কাঁঠালবাড়ী পর্যন্ত যাতায়াত করে। এরপর যাত্রীরা লঞ্চ, ফেরি অথবা স্পিডবোটে পদ্মা পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছান। সেই ভোগান্তির অবসান হচ্ছে পদ্মা সেতু উন্মোচনের মধ্য দিয়ে। ২৬ জুন থেকে বরিশাল, ভান্ডারিয়া, বাউফল ও কুয়াকাটা, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুট থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাবে বিআরটিসির বাস।

বাসে আধুনিক সব ব্যবস্থা সংযোজন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে নতুন বাসও সংযোজন হতে পারে। বরিশাল-ঢাকা রুটের ভাড়া কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে বেসরকারি পরিবহনের চেয়ে কম হবে।
জাহাঙ্গীর আলম, ব্যবস্থাপক, বিআরটিসির বরিশাল ডিপো

আর এসব রুটে প্রতিদিন ১৫টি বাস চলাচল করবে। ঢাকা থেকেও তেমনি ১৫টি বাস ছেড়ে আসবে বরিশালের উদ্দেশে। এর মধ্যে বরিশাল নথুল্লাবাদ বিআরটিসি ডিপো থেকেই ছাড়বে ১১টি বাস। বাসগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া সব কটিই শীতাতপ সংযোজন করা হচ্ছে।

বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে তাদের পুরোনো বাস মেরামতসহ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করেছে। বাসের জানালায় টাঙানো হচ্ছে পর্দা। সংযোজন করা হয়েছে ওয়াই–ফাই।

বিআরটিসির বরিশাল ডিপোর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা দিতে বাসে আধুনিক সব ব্যবস্থা সংযোজন করা
হচ্ছে। প্রয়োজনে নতুন বাসও সংযোজন হতে পারে। বরিশাল-ঢাকা রুটের ভাড়া কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে বেসরকারি পরিবহনের চেয়ে কম হবে।

বরিশাল বাস মালিক সমিতি জানায়, প্রথম পর্যায়ে বরিশাল থেকে ঢাকায় প্রায় অর্ধশত বিলাসবহুল এবং ১০০–এর মতো সাধারণ বাস চলবে। ধীরে ধীরে সব কোম্পানিই বাস চালু করবে। তবে এখন পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে শুধু কয়েকটি কোম্পানির বাসমালিক যোগাযোগ করেছেন।

পদ্মা সেতু দিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য মে মাস থেকে ইলিশ পরিবহনের দুটি এসি বাস নামানো হয়েছে। সেতু উদ্বোধনের আগপর্যন্ত এগুলো মাওয়া পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে।

এই সপ্তাহেই ইউনিক পরিবহন বরিশালে বাস চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে। সেতু উদ্বোধন হলেই এগুলো কুয়াকাটা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করবে। মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রিন লাইন পরিবহনও আবার বিলাসবহুল বাস চালু করছে।

হানিফ পরিবহনের বরিশাল কাউন্টারের ব্যবস্থাপক রানা তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরপরই তাঁদের কোম্পানির নতুন ১০টি বাস যাত্রীসেবায় যুক্ত করা হবে। এর মধ্যে চারটি এসি ও ছয়টি নন-এসি। সব কটি বাসই বিলাসবহুল।

অত্যাধুনিক বাস চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে বেসরকারি শ্যামলী পরিবহন কোম্পানিও। বর্তমানে এই পরিবহনের কোনো বাস দক্ষিণাঞ্চলের পথে চলাচল করে না।

শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এই বিভাগে আমাদের কোনো বাস চলাচল করে না। ফেরি পারাপারের ঝামেলার কারণে আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের অন্তত ১৪টি পথে আমাদের বাস চলাচল করবে।’

পদ্মা সেতু চালুর আগে বরিশালের বাস মালিক সমিতির প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘দফায় দফায় আলোচনা চলছে। গত মাস থেকে ইলিশ পরিবহনের দুটি বাস চালু হয়েছে। ইউনিক পরিবহনও প্রস্তুত। গ্রিন লাইনও আবার বাস সার্ভিস চালু করবে। কয়েক দিন আগে শ্যামলী পরিবহন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। শুনেছি, এনা পরিবহনও বরিশাল-ঢাকা রুটে বাস চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।’