বরিশালে মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

বরিশালে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়ার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মহিলা আওয়ামী লীগের সমাবেশ। আজ শুক্রবার নগরের সদর রোডের সোহেল চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। আজ বরিশাল জেলা ও নগর মহিলা আওয়ামী লীগের নেতারা সভা আয়োজন করে এ দাবি জানান। একই সঙ্গে তাঁরা গত বুধবার রাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত দলীয় নেতা–কর্মীদের সুচিকিৎসা এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।

সভায় অংশ নেওয়া বক্তারা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে আরও কঠিন কর্মসূচি দিয়ে দুর্বার আন্দোলন শুরু করা হবে। আমরা যে কত দূর যেতে পারি, তা আপনাদের চিন্তারও বাইরে।’

সভায় বক্তারা বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত মামলা। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ফাঁসাতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইউএনওর বাসায় কেউ হামলা করেনি। বরিশাল সিটি কপোরেশনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা গিয়েছিলেন ব্যানার–পোস্টার অপসারণে। সেখানে ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্যরা গুলি চালিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

আজ শুক্রবার বিকেলে নগরের সদর রোডের সোহেল চত্বরে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।  বরিশাল জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খালেদা হকের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন নগর মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পারভীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিগার সুলতানা, যুগ্ম সম্পাদক গায়েত্রী সরকার, জেলার সহসভাপতি শ্যামলী সাহা, বিসিসির সংরক্ষিত ১৯, ২০, ২১ কাউন্সিলর সালমা আক্তার প্রমুখ।

সভায় মহিলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, মেয়র ও বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে করা মামলায় যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা। তাঁর (মেয়র) এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। তাঁরা মেয়রের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবি জানান।

বরিশালে ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
প্রথম আলো

  প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছাসংবলিত ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ সময় ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাঁদের পরিচয় জানতে চান। পরে তাঁরা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হাসান আহমদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় সেখানে আনসার সদস্য ও পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ইউএনও মুনিবুর রহমান এবং কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল গাজী বাদী হয়ে থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। দুই মামলায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বুধবারের অপ্রীতিকর ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য নগরের কালীবাড়ি রোডে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন ঘিরে থাকেন। বৃহস্পতিবার  বিকেলে একটি সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার নিন্দা ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন দলীয় নেতারা। নগর ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগই প্রথম এ ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশ করল।

বাবুগঞ্জে মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
বরিশাল সিটি করপোরেশেন মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা, দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা এবং তাঁদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। শুক্রবার সকাল ১০টায় বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম খালেদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজজামানের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি রহমতপুর মীরগঞ্জ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম খালেদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মৃধা আক্তার উজ জামান, কেদারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম মৃধা, দেহেরগতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জসিম উদ্দিন, মাধবপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ খান, কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে আলম ব্যাপারী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।