বরিশালে শিশুদের টিকাদানের পর মিলছে না টিকা কার্ড, জন্মনিবন্ধনে বিড়ম্বনা
জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়া পর্যন্ত যেকোনো শিশুর পরিচয়ের দালিলিক প্রমাণ হলো ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) টিকাকেন্দ্র থেকে পাওয়া ছোট আকারের হলুদ কার্ড। প্রত্যেক শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্যও এই কার্ড অপরিহার্য। কিন্তু বরিশাল জেলায় গত ছয় মাসে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ শিশু এই কার্ড পায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হলুদ কার্ড সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে নবজাতকের অভিভাবক ও ইপিআই টিকাদানকর্মীদের মধ্যে প্রায়ই কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটছে।
টিকাদানে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কার্ডের সংকটের কারণে টিকাদানকেন্দ্রগুলোতে সাদা কাগজের স্লিপে লিখে টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাদা কাগজেই লিখে দেওয়া হচ্ছে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ। কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত সাদা স্লিপটি যেন না হারান, সে নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে অভিভাবকদের।
বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের ইপিআই টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা বলেন, এই কেন্দ্রে বরিশাল নগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। সে জন্য মাসে ১৬০-১৭০টি নতুন কার্ডের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় এর পরিমাণ ২০০ ছাড়িয়ে যায়। মহামারি করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ইপিআই টিকাদান কার্ডের সংকট দেখা দেয়। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কিছু টিকা কার্ড হাতে পেলেও তা ছিল চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের ইপিআই টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ নার্সরা বলেন, টিকা কার্ড দিতে না পারায় প্রায়ই অভিভাবকেরা তাঁদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। অনেক সময় বাগ্বিতণ্ডা হয়। একইভাবে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইপিআই টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিকাদানকর্মীদের সঙ্গেও অভিভাবকদের কথা-কাটাকাটি ও বাগ্বিতণ্ডা হয়।
এদিকে অভিভাবকদের ভাষ্য, টিকা কার্ড সব শিশুর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনের সনদের জন্য কার্ডটি থাকা বাধ্যতামূলক। আর কার্ডটি না পেয়ে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তাই তাঁরা ইপিআই কেন্দ্র থেকে শিশুদের দেওয়া টিকার কার্ড দ্রুত সংগ্রহ ও বিতরণের দাবি জানান।
বরিশাল নগরের আমানগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দেওয়ান মোহন বলেন, তাঁর শিশুর বয়স তিন মাস। একই এলাকার রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ইপিআই টিকাদানের পর এখনো কার্ড পাননি তিনি। তাই সন্তানের জন্মনিবন্ধনও করাতে পারেননি।
নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর কাজীর গোরস্তান এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁর শিশুর প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্ড পাননি এখনো। হাতে সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জন্মনিবন্ধনের জন্য শিশুর ইপিআই টিকা কার্ড চাওয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট এনায়েত হোসেন বলেন, মহামারি করোনার সংক্রমণের পর থেকে প্রচুর কোভিড-১৯-এর টিকা কার্ড এসেছে। তবে সে সময় থেকেই ইপিআই টিকাদান কার্ড (শিশু এবং কিশোরী/নারী) আসা কমে যায়। পরবর্তী সময়ে এর সংকট দেখা দেয়। মাঝেমধ্যে যেগুলো আসছে, তা চাহিদার চেয়ে কম।
এনায়েত হোসেন বলেন, সর্বশেষ গত বছরের মাঝামাঝিতে বরিশাল জেলার ইপিআই টিকাদানকেন্দ্রগুলোর জন্য শিশু এবং কিশোরী-নারী মিলিয়ে আড়াই লাখ কার্ড চাওয়া হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্ড আসেনি। তিনি বলেন, ‘তিন মাস পরপর চাহিদাপত্র পাঠানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। আশা করছি দ্রুত কার্ড পেয়ে যাব। মাঠপর্যায়ে কার্ড বিতরণের মধ্য দিয়ে চলমান সমস্যার সমাধান হবে।’
টিকা কার্ডের এমন সংকট শুধু বরিশাল জেলাতেই নয়, পুরো বিভাগের ৬ জেলাতেই আছে। বিভাগের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার ইপিআইয়ের কেন্দ্রগুলোতেও টিকা কার্ড দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কার্ড-সংকটের কারণে এসব কেন্দ্রেও সাদা কাগজে হাতে লেখা স্লিপ দিয়ে টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, কার্ডের চাহিদার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় দেখভাল করে। তারপরও যাতে দ্রুত কার্ড সংগ্রহ করা যায় এবং এর চাহিদা স্বাভাবিক রাখা যায় সে বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর উদ্যোগ নেবে বলে জানান তিনি।